ভোমরাডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা ও বাটিকাডাঙ্গা গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ : পুলিশের গুলি

স্টাফ রিপোর্টার: কোটচাঁদপুরের পল্লি চুয়াডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থানের নামকরণ নিয়ে তিন গ্রামবাসীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। গত তিন দিন ধরে দফায় দফায় হামলার পর গতকাল সকালে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশকে ছুড়তে হয় গুলি ও টিয়ারসেল। সংঘর্ষ ও গুলিতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পাশাপাশি তিন গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।

স্থানীয়রা বলেছেন, পাশাপাশি তিন গ্রামবাসীর উদ্যোগে কুড়ি বছর আগে স্থাপিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়য়ের নামকরণ করা হয় বিসিবি। ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরের দোরা ইউনিয়নের ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের প্রথম অক্ষর ‘বি’ একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম চুয়াডাঙ্গার ‘সি’ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনয়নের বাটিকাডাঙ্গার ‘বি’ নিয়েই মূলত নামকরণ করা হয় বিসিবি। দীর্ঘদিন পর এ নামকরণ নিয়ে বাধে বিরোধ। স্থানের নাম চুয়াডাঙ্গা লিখতেই শুরু হয়েছে তিন গ্রামের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ। সর্বশেষ গতকাল সোমবারের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশকে কমপক্ষে ৯ রাউন্ড গুলি ও ২টি টিয়ারসেল ছুড়তে হয়েছে। সংঘর্ষে ও পুলিশের শটগানের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ জন। এরা সকলেই বলেছেন, তাদের পিঠে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লেগেছে। এরা হলেন- কোটচাঁদপুর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে রিয়াজ উদ্দীন (৪৫), একই গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৪৫), চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের মৃত হাজের আলীর ছেলে সমোর আলী (৬০) ও একই গ্রামের মৃত ওসমানের ছেলে সব্দুল (৫০)।

প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আমাদের কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সকালে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দু গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এ হামলায় বেশি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে নারী ও শিশু। পুলিশ উত্তেজিত গ্রামবাসীকে শান্ত করতে ৯ রাউন্ড গুলি ও ২টি টিয়ারসেল ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে ৮ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। বর্তমানে এলাকায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার দাঙ্গা পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, উপজেলার বিসিবি মাধ্যমিক স্কুলের বর্তমান ঠিকানার স্থলে স্কুল কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলী চুয়াডাঙ্গা গ্রামের নামে নামকরণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। স্কুলের ঠিকানা পরিবর্তনে সভাপতির এ প্রয়াসে ভোমরাডাঙ্গা ও বাটিকাডাঙ্গা গ্রামবাসীর বিরোধ শুরু হয়। এরই জের ধরে শনিবার স্কুল ছুটির পর দু গ্রামবাসী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। শনিবারের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৮ জন আহত হয়। রোববার দিনগত রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা ভোমরাডাঙ্গা গ্রামবাসীর ৮ বিঘা জমির লাউ, বেগুন ও কপি কেটে সাবাড় করে। এ ঘটনায় ভোমরাডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা গ্রামবাসীর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার সকালে ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে একত্রিত করা হয়। এ সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ভোমরাডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মধ্যে নতুন করে দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। সোমবারের এ দাঙ্গায় চুয়াডাঙ্গা গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এলাকাবাসী জানায়, এ দাঙ্গা থামাতে পুলিশের গুলিতে চুয়াডাঙ্গা গ্রামের বাবলু, রাজু, শফি, ইছাহাক, রফিকুল, রিয়া এবং বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের সবদুল ও সমর আলী আহত হয়েছে।

এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত এলাকায় ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ পিপিএম, কোটচাঁদপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম পিপিএম, কোটচাঁদপুর থানার ওসি আহাম্মেদ কবির হোসেন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবপ্রসাদ পালসহ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।