ভোট দিয়েই ভোট নেবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটারযোগ্য একজন নাগরিকের ভোটও যেন বাদ না পড়ে সে লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো আগাম ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনকালীন দাযিত্বরত ৪ লাখ ৮০ হাজারের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত থাকা ১০ লাখের বেশি নাগরিকের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার কেন্দ্র ও ২ লাখ ভোটকক্ষ থাকে। এতে ৪০ হাজার প্রিসাইডিং অফিসার ও ৬ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকেন। এরা কেউই নিজের ভোটটি দিতে পারেন না। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ জন সদস্য থাকেন। এ হিসেবে ৪ লাখ ৮০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোট দিতে পারেন না। এর বাইরে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে আরো কয়েক লাখ সদস্য ভোট দিতে পারেন না। তাদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) এ বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বদলির ক্ষমতা ইসির হাতে রাখতে আরপিওর ৭(৬) ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে।

গত বছরের ১৬ জুলাই বিদ্যমান ১৪টি আইন ও বিধি সংস্কার করার জন্য নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমকে প্রধান করে আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি গঠন করে ইসি। আইন-বিধি সংস্কারের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছিলো কমিটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েক কর্মকর্তা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ওপর মোট ৯২টি সংশোধনীর প্রস্তাব পেশ করেন। ৩১ জুলাই থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয় ইসি। এরপর বিভিন্ন প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আরপিওতে সংযোজন/বিয়োজন ও সংশোধনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে ৩৪টি সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাবনা তৈরি করেছে কমিটি।
আরপিওর ২৭(১)(২) ধারায় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আগাম ভোট গ্রহণ ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে ভোট দিতে হবে তাদের। এতে ইসির নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কাউকে বদলি করতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওই আদেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার শর্ত সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাবনায়। এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর জামানত বাড়ানোর বিষয়ে আরপিওর ১৩(১)(এ) ধারায় ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাস্তবতার নিরিখে জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হলো। কোনো আসনে দুই বা তার বেশি প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পেলে সেখানে ওইসব প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় ভোট গ্রহণের বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী পরিবেশ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়ম, কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল কর্তৃক বড় ধরনের অনিয়ম বা আচরণবিধি লঙ্ঘন ইত্যাদি সম্পর্কে সরাসরি খোঁজখবর নিতে তৃতীয় চোখ নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস করার জন্য মনোনয়ন দাখিলের সাত দিন পূর্বের পরিবর্তে মনোনয়ন দাখিলের দিন ঋণ খেলাপি তালিকা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জমা নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী পোলিং এজেন্টরা প্রার্থীর প্রদত্ত প্রতীক সংবলিত কার্ড বুকে ঝুলিয়ে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এটি পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয়পত্র বহনের জন্য নতুন প্রস্তাবনা এসেছে।
নির্বাচন কমিশনের আইন-বিধি সংস্কার কমিটির প্রধান কবিতা খানম এ বিষয়ে বলেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আগাম ভোট গ্রহণের সুযোগ রাখতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও নির্বাচনের কাজে নিয়োজিতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলির ক্ষমতা, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।