ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের ২৫ চেয়ারম্যান : বাগেরহাটেই ১৯ জন

বাধার মুখে ৭০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার: ভোটের আগেই ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে বাগেরহাট জেলাতেই রয়েছেন ১৯ জন। আর ৭০টি ইউনিয়নে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের বাধার কারণেই বিএনপির প্রার্থীরা ওইসব ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। অন্য অনেক দলের প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে সরকারি দলের সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন। এই তালিকায় মহাজোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোও রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি, তাদের মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেয়া অন্যায়, আর প্রতিকার না পাওয়া মহাঅন্যায়।

প্রথম ধাপে আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠেয় ৭৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের ৭৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে তিনটি ইউপিতে দুজন করে প্রার্থী রয়েছেন। নতুন আইন অনুযায়ী এই তিন ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কথা। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রয়েছে ৬৬৮ জন। চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ১৬৬৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী।

এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে না পারার কারণ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে গত সোমবার অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির অন্তত ২০ জন প্রার্থী। গতকাল কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও বিষয়টি আলোচনায় স্থান পায়নি। ফলে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে না পারা ব্যক্তিরা আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। যেসব অভিযোগ এসেছে তাতে বাধা দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। প্রথম ধাপে ৭৩৮টি ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৫৬৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ১৬টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৯০০ প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ১৬৬৮ জন। সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২৭ হাজার ৯৪৭ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজার ৯১৫ জন। গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র বাছাই শুরু হয়েছে। আজ বুধবার বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হবে। ২ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা।

৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুজন করে প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপল, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ও কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়া।

২৫ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান হলেন যারা: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। এর মধ্যে বাগেরহাটেই ১৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে আবার তিনজন নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতায় মনোয়ার হোসেন টগর, বিঞ্চুপুরে শংকর কুমার চক্রবর্তী, ডেমায় মো. মনি মল্লিক, গোটাপাড়ায় শেখ সমশের আলী, যাত্রাপুরে মোল্লা আব্দুল মতিন, রামপাল উপজেলার মালিকেরবেড়ে তালুকদার নাজমুল কবির, চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারীতে অশোক কুমার বড়াল, বড়বাড়িয়ায় মোঃ মাসুদ সরদার, হিজলায় কাজী আজমীর আলী, সন্তোষপুরে বিউটি আক্তার, কলাতলায় শিকদার মতিয়ার, ফকিরহাট উপজেলার ফকিরহাটে শিরীনা আক্তার, মুলঘরে হিটলার গোলদার, মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়িতে মশিউর রহমান মিয়া, কোদালিয়ায় বিএসএমবি জামান সাইফুল, কুলীয়ায় বাবলু মোল্লা, উদয়পুরে এসকে হায়দার মামুন, মংলা উপজেলার সোনাইলতলায় নাজিনা বেগম নারজিনা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণে আ. রাজ্জাক মজুমদার, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচরে মো. সিদ্দিকুর রহমান, ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদিতে ইফতালুল হাসান, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমইলে মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে মো. আতিকুর রহমান মাদবর, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসারে রফিকুল ইসলাম ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়ায় মনিরুল। অভিযোগ উঠেছে, এসব ইউপিতে বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়া হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে প্রার্থীদের বাড়িতে।

ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

বিএনপির প্রার্থী নেই যেসব ইউপিতে: যে ২৫ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সেই ২৫টি ছাড়াও আরো ৪৫টি ইউপিতে প্রার্থী নেই বিএনপির। ইউপিগুলো হলো- খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর, দাকোপ উপজেলার কৈলাসগঞ্জ, কামারখোলা, তিলডাংগা, তেরখাদা উপজেলার তেরখাদা, সাচিয়াদহ, ছাগলাদহ, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার বুড়িরডাংগা, রামপাল উপজেলার গৌরন্বা, রাজনগর, চিতলমারী উপজেলার চিতলমারী, শিবপুর, ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ, মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা, গাওলা, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, কচুয়া উপজেলার কচুয়া, ধোপাখালী, গজালিয়া, রাড়ীপাড়া, সাতক্ষীরা দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া, কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল, ধলবাড়িয়া, কৃঞ্চনগর, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী, কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া, কেরালকাতা, যুগীখালী, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী, বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী, কেউড়াবুনিয়া, আমতলী উপজেলার কুকুয়া, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি, ঢাকা দোহারের নয়াবাড়ি, নেত্রকোনার খালিয়াজুরির উপজেলার গাজিপুর, গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়া উপজেলার বর্নি, ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলি, পাটগাতি, শেরপুরের নলিতাবাড়িয়া উপজেলার বাঘবেড়, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর, নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার চরইশ্বর, চরকিং এবং লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা।

দুই দলেই আছে বিদ্রোহী প্রার্থী: ইউপি নির্বাচনে যে এক হাজার ৬৬৮জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তার বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। গত সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দু দলের অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। কোনো কোনো ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৩-৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের চার শতাধিক ও বিএনপির দেড় শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।