ভোটকেন্দ্রে মোবাইল বিড়ম্বনা : ইবিতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত : ৩ নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০১৫ স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে ভোটগ্রহণের আধাঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে অনিবার্যকারণবশত নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্যানেলের শিক্ষকদের মধ্যে মতৈক্য না হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানসহ আরও দুজন সহকারী নির্বাচন কমিশনার। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা পদত্যাগ করেছেন বলে নিজ নিজ পদত্যাগপত্রে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের ৪২৭ নং কক্ষে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০১৫ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষকরা ভোট প্রদানের জন্য অনুষদ ভবনের ৪২৭ নং কক্ষে উপস্থিত হন। জানা গেছে, ভোটগ্রহণের আগেই নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিতের কথা জানানো হয়। শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে টানানো নোটিশে অনিবার্যকারণবশত নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রজমান। পদত্যাগকারী অপর দুজন সহকারী নির্বাচনী কমিশনার হলেন- অধ্যাপক ড. আব্দুল মোত্তালিব (আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ) ও সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন (বাংলা বিভাগ)। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, অনির্বাকারণবশত নির্বাচন স্থগিত ও পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করা হলেও এর ভেতর রয়েছে অন্য কারণ। একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ৫টি নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনি বিধি প্রণয়ন করে। ভোট প্রদানের সময় ভোটকেন্দ্রে মোবাইলফোনসহ কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্বাচনী বিধিতে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, আওয়ামীপন্থি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের একটি অংশ ভোট কেন্দ্রে মোবাইলফোন ব্যবহার করার সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চাপ দিচ্ছিল। অপরদিকে ওই ৫টি নির্দেশনার বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়ে দেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা। এ বিষয়ে শিক্ষকদের দুমুখো অবস্থানের কারণে চাপে ছিলো নির্বাচন কমিশন। এমতাবস্থায় নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে তারা নির্বাচনের দায়ভার এড়াতে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ থেকে পদত্যাগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার সমকালকে বলেন, ভোটকেন্দ্রে মোবাইলফোন ব্যবহার নিয়ে শিক্ষকদের বিপরীতে মুখে অবস্থানের কারণে আমরা নির্বাচন স্থগিত করেছি। সামান্য বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের এরকম মনোভাব হলে নির্বাচন করা যায় না। জানা গেছে, আওয়ামী ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের একটি অংশ চাচ্ছিলেন কোনো শিক্ষক যাতে তার নিজের ভোট দলীয় প্রার্থী বাদে অন্য প্যানেলের প্রার্থীকে ভোট না দেন সেজন্য ব্যালট পেপারে সিল মেরে তার ছবি মোবাইলফোনে ধারণ করে পরে তা দেখাতে হবে।

নির্বাচন স্থগিত ও পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আওয়ামী ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. এএইচএম আক্তারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক সংগঠন ও আমাদের সাথে কোনো আলোচনা না করেই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এতে আমি বিষ্মিত হয়েছি। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে যদি নির্বাচন কমিশন মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী সমকালকে বলেন, পদত্যাগপত্র পেয়েছি। তবে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে কি-না এবং পরবর্তীতে নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হবে তা শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শিক্ষকদের মধ্যে হট্টগোল: এদিকে নির্বাচন শুরুর আগে ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্যানেলের শিক্ষকদের কথা কাটাকাটি ও হট্টগোল হয়েছে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে আওয়ামী ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমর্থিত প্যানেলের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক সমর্থিত প্যানেলের কয়েকজনের শিক্ষকের কথা কাটাকাটি ও হট্টগোল হয়। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

নির্বাচন স্থগিত করায় শিক্ষকদের নিন্দা: অন্যদিকে নির্বাচন স্থগিত করায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষকরা। সকাল পৌনে ১১টার দিকে শিক্ষক লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের শিক্ষকরা। এ সময় তারা বলেন, শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদের খ এর ৮-এ বলা আছে, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন সম্পূর্ণ গোপন ব্যালট পদ্ধতিতে হবে। ফলে ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আকস্মিকভাবে নির্বাচন স্থগিত করায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম।