ভুয়া কাগজে ব্যাংক থেকে ৯০ কোটি টাকা তোলার সময় ১১ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: জালিয়াতির মাধ্যমে একজন প্রবাসীর ব্র্যাক ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) হিসাব থেকে ৯০ কোটি টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ১১ প্রতারক। রোববার ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে প্রতারক চক্রটি বিপুল অঙ্কের এ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তাদের গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে কাজী সাহাদাত হেসেন, হাসিবুল হাসান, মিরাজুল ইসলাম মুন্না, সাব্বির রহমান, নজরুল হক, শাহাবুর রহমান বাবলু, খোরশেদ আলম, দেলোয়ার হোসেন, সেলিম আহম্মেদ, শাহজাহান ও মাহবুবুর রহমান কাজল নামে ১১ জনকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রতারকরা বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত। কেউ কেউ ব্যবসা করতে গিয়ে পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন। তারপর জড়িয়ে পড়েছেন প্রতারণা চক্রে। ব্র্যাক ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স সেকশনের সিনিয়র ম্যানেজার সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকে সাইফুল ইসলাম নামের এক প্রবাসীর ৯০ কোটি টাকার একটি এফডিআর রয়েছে। রোববার দুপুরের দিকে তিনি ব্যক্তি ব্যাংকে গিয়ে দাবি করেন, সাইফুল ইসলাম এফডিআরটি তাদের ১১ জনের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) করে দিয়েছেন। তারা সেই টাকা উঠাতে এসেছেন।

বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে। শাখা ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ আশফাক কৌশলে তাদের জানান, টাকা উত্তোলন করতে হলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে নাম থাকা ১১ জনকেই প্রয়োজন। এ কথা বলার পর চার দফায় ১১ জনই ব্যাংকে উপস্থিত হন। এরপরই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। গুলশান থানার পুলিশ এসে ১১ জনকে আটক করে নিয়ে যায়।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, এফডিআরের পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কাগজপত্র ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। আসলে এরা একটি বড় প্রতারক চক্রের সদস্য। তাছাড়া এভাবে টাকা তোলারও সুযোগ নেই। স্থায়ী আমানতের টাকা তুলতে গ্রাহককে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। তিনি মারা গেলে, নমিনি (মনোনীত ব্যক্তি) টাকা তুলতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রেও অনেক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, এফডিআরের গ্রাহক সাইফুল ইসলাম তাদের আগেই এমন সন্দেহের কথা জানিয়ে রেখেছিলেন যে, কোনো একটি চক্র তার ব্যাংক হিসাব নিয়ে প্রতারণা করতে পারে। এরপর ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তা এ বিষয়টিকে তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখেন। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রবাসী সাইফুল ইসলাম ব্র্যাক-ইপিএলের একজন পরিচালকও। তিনি শেয়ার ব্যবসায়ও সম্পৃক্ত।

গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি বোঝা গেছে। তবে এর সাথে ব্যাংকের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার আভাস মিলেছে। এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।

এদিকে পুলিশ হেফাজতে প্রতারকচক্রের সদস্য হাসিবুল ও কাজল স্বীকার করেন, এফডিআরের টাকা উঠানোর অভিপ্রায়ে তারা প্রথমে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে। ওই কর্মকর্তারা তাদের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেয়। সে অনুযায়ী এগোলেও শেষ পর্যন্ত তারা ধরা পড়ে যান।