ভুল দিয়ে শুরু

স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলাটিতে ঘটনাস্থলের যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। এজাহারে উল্লেখ করা ঠিকানা রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে পাওয়া যায়নি। বাড়িটির কোনো ফ্ল্যাটে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিলো তাও উল্লেখ করা হয়নি। আজ বুধবার ঘটনার ৩ বছর অতিক্রম হলেও মামলার মৌলিক এসব গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি আদালতের নজরে আনা হয়নি। প্রথম এজাহার ও সম্পূরক এজাহারে ঘটনার সম্ভাব্য সময়ও দেয়া হয়েছে দু রকম। আর বাদীর দেয়া এসব তথ্যের কারণে মামলার ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেছেন কয়েকজন আইনজীবী। এছাড়া পুলিশ সাগর ও রুনীর ব্যবহৃত দুটি মোবাইলফোন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করলেও তা রহস্যজনক কারণে মূল জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের হেফাজত থেকে গায়েব হয়ে গেছে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হওয়া বাড়ির এক দারোয়ানের মোবাইল ফোনও।

এদিকে এ মামলায় দেয়া তথ্যমতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনীর শিশুপুত্র মাহির সরোয়ার মেঘ এবং খবর পেয়ে প্রথম দেখতে আসা রুনীর মা নূরুন্নাহার মির্জা ও তার ছেলে নওয়াজিশ আলম রিমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আজও নেয়া হয়নি। অথচ তাদের জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালত অনেক আগেই ৱ্যাবকে নির্দেশনা দিয়েছিল। আদালতে জমা দেয়া র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদীর অসহযোগিতার কারণে তারা জবানবন্দি দেয়ার জন্য আনতে পারেননি।

উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং প্রচলিত রীতি যে, ফৌজদারি মামলার বিচারের সময় সর্বদাই ও সঠিকভাবে ইহা উপস্থাপন ও প্রমাণ করা হয়। প্রখ্যাত আইনবিদ গাজী শামসুর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধির ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন, এজাহার একটি মূল্যবান দলিল। অপরাধ বিষয়ে এজাহারই হচ্ছে আদি দলিল। এজাহার হচ্ছে সেই দলিল যার ভিত্তিতে পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠে।

অস্তিত্বহীন ঘটনাস্থল: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনী ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির ৫ তলার এ-৪ ফ্ল্যাটে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই ফ্ল্যাটেই তারা নৃশংসভাবে খুন হন। ঘটনার পরদিন নিহত রুনীর ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ৫৮/২/বি পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় তার বোন ও ভগ্নিপতি খুন হয়েছেন। কিন্তু বাড়িটির কোন ফ্ল্যাটে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড ঘটে তাও উল্লেখ করা হয়নি। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বাদীর উল্লেখ করা আলোচিত এই হত্যার ঘটনাস্থলের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তেজগাঁও থানার আওতাভুক্ত ৫৮/বি/২ পশ্চিম রাজাবাজারে একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। যার সঙ্গে ঘটনাস্থলের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকারের যাচাই-বাছাই ছাড়াই অস্তিত্ববিহীন এই ঠিকানাকে হত্যার ঘটনাস্থল হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।

এদিকে বাদী নওশের আলম রোমান ঘটনার ৩ দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি খোয়া যাওয়া মূল্যবান মালামালের তালিকা উল্লেখ করে শেরেবাংলা নগর থানায় সম্পূরক আরেকটি এজাহার দাখিল করেন। তবে সেখানে ঘটনাস্থলের কোনো ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। এজাহার ও আলামত জব্দের ঠিকানা পৃথক হওয়ায় আইনজ্ঞরা বলছেন, আলোচিত এ মামলাটিই শেষ করে দেয়া হয়েছে। যার সুবিধা নেবে আসামিপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু বলেন, আইনের ভাষায় মামলা বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে। বাদী যদি ভুল ঠিকানা দিয়ে থাকেন তাহলে তো মামলাই আর থাকে না। এমন কিছু হয়ে থাকলে এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তিনি বলেন, ঘটনা তো সত্য। তাই কেন ভুল ঠিকানা দেয়া হল সে বিষয়ে তদন্ত সংস্থার দায়িত্ব এ বিষয়ে বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থা বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে পারে। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়েও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।