ভিমরুল্লার চালক তুফানকে কাঁদায় খুশে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই

 

 

দর্শনা অফিস/দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লার তুফান মালিতাকে (৫৩) হত্যা করে তার ইজিবাইকটি নিয়ে সটকেছে একদল ছিনতাইকারী। গতপরশু রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকালে দর্শনা রামনগর-গোপালপুরের মধ্যবর্তী মাঠের একটি ধানক্ষেত থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে ২০১১ সালের ১১ আগস্ট রাতে দর্শনার পরানপুর-লোকনাথপুর সড়কে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার অটোচালক জহুরুল ইসলামকে খুন করে ছিনতাইকারীরা। জহুরুল ইসলামকেও মোটা অংকের ভাড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যা করে তার ব্যাটারিচালিত অটোবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। ভিমরুল্লার তুফান মালিতাকেও মোটা অংকের ভাড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যা করে তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। পুলিশ ও তার পরিবারের সদস্যরা এরকমই মন্তব্য করে মোবাইলফোনের সূত্র ধরে ঘাতক ছিনতাইকারীচক্র শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে নিহত তুফান মালিতার ছেলে হাফিজুর বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাত খুনিরা খুন করে ইজিবাইকটি ছিনতাই করেছে বলে মামলায় বলা হয়েছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘাতকচক্রের তেমন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লা স্কুলপাড়ার বকশ মালিতার ছেলে তুফান মালিতা কয়েক মাস আগে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইকটি কুষ্টিয়া থেকে কেনেন। ধারকর্য করে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা দিয়ে ইজিবাইক কিনে চুয়াডাঙ্গা শহরে ভাড়া মারতেন। গতপরশু রোববার তিনি বিকেলে বাড়ি থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। রাত ৮টার দিকে বাড়ির নিকটস্থ চাচাতো ভাই শাহাদতের চায়ের দোকানে বসে চাপান করেন। এ সময় একজন মোবাইলফোনে ডাকে। শাহাদত রাতে ভাড়া মারতে না যাওয়ার জন্য বললে তুফান মালিতা বলেন, শনিবারেও ওদের ভাড়ায় গিয়েছিলাম। ৫শ টাকার ভাড়ার মধ্যে ৩শ দিয়েছে। ২শ বাকি আছে। আজ দিয়ে দেবে। পরিচিত। এ কথা বলে তুফান মালিতা দর্শনা অভিমুখি রওনা হন। রাত ১১টার দিকেও বাড়ি না ফেরায় ছেলে মোবাইলে কল করে। তখন মোবাইলফোনটি বন্ধ। সেই যে বন্ধ আর খোলেনি। সকালে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের সদস্যরা। উজিরপুর তাল্লু স্পিনিং মিলের অদূরবর্তী মোড়ের বারেকের হোটেলের সামনে থেকে রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইজিবাইকে কয়েকজনকে ওঠার খবর পেলেও তাদের পরিচয় জানতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন চাচাতো ভাই মিরাজ ও ছেলে হাফিজুর। অবশেষে সন্ধান পায় দর্শনা-কার্পাসডাঙ্গা সড়কের গোপালখালী ব্রিজের অদূরে বোয়ালমারী নামকস্থানে খাদের কাদায় লাশ রয়েছে। ছুটে গিয়ে নিকটজনেরা লাশ শনাক্ত করে। তুফানকে পার্শ্ববর্তী খাদের কাদায় মুখ গুজে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে সুরতহাল দেখে মন্তব্য করেছে স্থানীয়রা। লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে নিকটজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। গতকালই বাদ মাগরিব গ্রাম্য কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অপরদিকে ছেলে বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছেন।

নিহত তুফান মালিতা ছিলেন এক ছেলে এক মেয়ের জনক। ছেলে হাফিজুর প্যারাডাইস টেইলার্সের শ্রমিক। মেয়ে বিবাহিত। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতেই তুফান মালিতা ধার কর্য করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তথা ইজিবাইক কিনে সড়কে যাত্রী বহন করে আসছিলেন। যাত্রী বেশে ছিনতাইকারীরাই তাকে হত্যা করে সটকে পড়েছে। গতকাল লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহে, সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান ও দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ সিকদার মশিউর রহমান। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্যই ছক কষে তারা তুফানকে হত্যা করে ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে। ঘাতকচক্র শনাক্তের কাজ শুরু হয়েছে।