ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়েছে শিশুরা

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারাদেশে একযোগে ব্যাপক কর্মসূচির পালন

স্টাফ রিপোর্টার: দেশব্যাপি বিনামূল্যে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেলো শিশুরা। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারাদেশে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এর মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুরা একটি করে নীল রঙের এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুরা লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খায়। একই সাথে শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোর জন্য পুষ্টি বার্তা প্রচার করা হয়।

এছাড়া ভাসমান শিশুদের বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রিজের টোলঘর, বিমান বন্দর, রেল স্টেশন ও খেয়াঘাটেও ক্যাপসুল খায় শিশুরা। তবে বাদপড়া শিশুদের পরবর্তী আরো চারদিন বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামে গতকাল শনিবার সকাল আটটায় চার বছর বযসী রোকেয়া খাতুনের মুখে লাল রঙের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর মধ্যদিয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খন্দকার মিজানুর রহমান। এ সময় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহাদাৎ হোসেন ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রেজাউল করীমসহ স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বেলা ৪টা পর্যন্ত জেলার ৯৬৯টি কেন্দ্রে ৬-১১ মাস বয়সের ১৫ হাজার ৩৭৬ জন শিশুকে ১টি নীল রঙের ও ১ থেকে ৫ বছর বয়সের ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০ জন শিশুকে ১টি লাল রঙের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। এছাড়া আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি যেয়ে বাদপড়া শিশুদের অনুসন্ধান করে ভিটামিন-এ প্লাস খাওয়ানো হবে।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, গতকাল ৫ এপ্রিল শনিবার দেশব্যাপি জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন দর্শনা পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে এ ক্যাম্পাইনের উদ্বোধন করেন দর্শনা পৌর মেয়র মহিদুল ইসলাম। এবার দর্শনা পৌরসভায় ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী মোট ২ হাজার ৭৭০ জন শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পৌর প্যানেল মেয়র-১ শরীফ উদ্দীন, প্যানেল মেয়র-২ রেজাউল ইসলাম, প্যানেল মেয়র-৩ বিলকিস খাতুন, কাউন্সিলর ফারুক হোসেন, এনামুল হক, রবিউল হক সুমন, আব্দুর রাজ্জাক, লুৎফর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান খান সায়েম, জাহিরুল ইসলাম, সেলিনা পারভীন, কাঞ্চন বিবি, পৌরসভার প্রধান সহকারী রুহুল আমিন, হিসাবরক্ষক সরওয়ার হোসেন, ক্যাশিয়ার রুমি আলম পলাশ, করনির্ধারক আরেফিন, কম্পিউটার অপারেটর মেহেদী হাসান প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নসহ জীবননগর পৌরসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়। জীবননগর পৌর মেয়র নোয়াব আলী পৌরসভায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মো. আবু হাসানুজ্জামান নুপুর ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার উথলী, আন্দুলবাড়িয়া, বাঁকা, সীমান্ত, হাসাদাহ ও রায়পুর ইউনিয়নে ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ১৪ হাজার ৪২১ জন শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ৫ জন  প্রতিবন্ধী শিশু, ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৪২ জন প্রতিবন্ধী শিশু, ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ১ হাজার ৯১২ জন স্বাভাবিক শিশুসহ ১৪ হাজার ৪২১ জন শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এসটি ইপিআই জুলফিকার রহমান জানিয়েছেন। অন্যদিকে জীবননগর পৌরসভার ২৯টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৮৯৫ জন শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৯৫ শিশুকে গতকাল পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত পৌর সেনেটারি ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুজিবনগরে শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে মুজিবনগর ভবেরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুন কুমার মণ্ডল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য প.প. কর্মকর্তা ডা. হাসান আলীসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬-১১ মাস বয়সী ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ৯ হাজার ৬১৬ জন শিশুকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অবস্থিত টিকাদান কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান, শহরের বাসস্ট্যান্ড ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কেন্দ্রে ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার উত্তর উজিরপুরে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খেয়ে বৃষ্টি (২) নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃষ্টি একই গ্রামের বিশুরত আলীর (বিশু) মেয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে স্থানীয় একটি টিকাদান কেন্দ্রে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ার জন্য বৃষ্টিকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার সাথে সাথেই সে মারা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল করিম জানান, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ভিটামিন খাওয়ার ৫-৭ মিনিট পর শিশুটি মারা যায়। তবে ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ার জন্য সে মারা যায়নি। অন্য কোনো সমস্যার কারণে শিশুটি মারা যেতে পারে। কেননা আজ উপজেলার প্রায় ৬২ হাজার শিশুকে এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। অন্য কোথাও এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন মোজাহারুল হক জানান, বিষয়টি তিনি অবহিত হয়েছেন এবং তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তিনি জানান, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে এখন পর্যন্ত কোনো শিশু মারা যায়নি। কি কারণে মারা গেছে তা তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দিলেই পাওয়া যাবে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সারাদেশে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের আওতায় শিশুদের এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্বোধন করা হয়। গতকাল শনিবার সকালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন। সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মিজানুর রহমান, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা. এমএ বাশার, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. তাপস কুমার সরকার, আরএমও ডা. অলোক কুমার দাসসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬-১১ মাস বয়সী ৮ হাজার ১১৯ জন ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ৫৬ হাজার ৪৪০ জন শিশুকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার ১৮টি ইউনিয়নে অবস্থিত টিকাদান কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান, শহরের বাসস্ট্যান্ড, পৌরসভা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।