ভাষা আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার ভূমিকা

খাইরুজ্জামান সেতু: অন্যান্য জাতীয় আন্দোলনের মতো ভাষা আন্দোলনেও চুয়াডাঙ্গা পিছিয়ে থাকেনি, বরং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ঘটনা ঘটে ১৯৪৮ সালের ১৫ই আগস্ট। তরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আজি হতে শত বর্ষ পরে’ নাটকটি স্থানীয় শ্রীমন্ত টাউন হলে মঞ্চস্থ হয়। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত এই নাটকে অভিনয় করেন-সুলতান রাজ, আবদুল কাদির, মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ।

৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গার নীলমণিগঞ্জের পরিমল বোসের বাড়িতে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম প্রণেতা এনএন সাহা। বক্তব্য রাখেন পরিমল বোস, হাবু ঘোষ, তারাপদ মৈত্র, অমূল্য ঘোষ, জব্বার খান, সৈয়দ আলী, আতিয়ার রহমান, অমৃত লাহিড়ী প্রমুখ। সভায় গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্দোলন বেগবান করার শপথ নেয়া হয়। সভা শেষে এক মিছিল বের হয়। কিন্তু সভার কথা ফাঁস হয়ে পড়ে। ফলে ওই রাতেই পুলিশ প্রত্যেকের বাড়িতে হানা দেয়। ওই রাতেই পরিমল বোস প্রথম গ্রেফতার হন। অন্যরা আন্দোলনের স্বার্থে গা ঢাকা দেন।

এনএন সাহা ওই রাতেই গোপনে পরিমল বোসের গ্রেফতারের সংবাদ চুয়াডাঙ্গাতে পৌঁছান। নেতৃবৃন্দ পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা ভি.জে স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় পরিমল বোসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ রহিম বক্স। বক্তব্য রাখেন ডা. আশাবুল হক, ওবায়দুর রহমান, ওহিদ হোসেন, মজিবর রহমান ও রফাতুল্লাহ। তুখোড় ছাত্রনেতা ওহিদ হোসেনকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচন করা হয়। এছাড়া উপস্থিত সবাইকে সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আহ্বানে সাড়া দেয়। প্রখ্যাত ছাত্রনেতা মোহাম্মদ শাহজানের যোগ্য নেতৃত্বে বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে আলী মিয়ার আমবাগানে সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন অ্যাড. আবুল হাশেম। বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ শাহজাহান, ঊষা চ্যাটার্জী, ইলা হক, শশধর চট্টোপাধ্যায়, বেলা ও সুধীন সরকার।

মিছিল-মিটিং এ তৎকালীনন সরকার ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন দমনের উদ্দেশে নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও সমস্ত শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে নেতারা আত্মগোপন করেন।

১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য চুয়াডাঙ্গা শহরে অ্যাড. তৈয়বুর রহমান ও অ্যাড. আজগার আলীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে অ্যাড. আজগার আলী প্রথম গুলিবিদ্ধ হন। তারিখটা ছিলো ২৫ ফেব্রুয়ারি।

২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এমএল হক চুয়াডাঙ্গার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের তার সম্মেলন কক্ষে ডাকেন। পুলিশ সুপার অভিযোগ করে বলেন, ‘হিন্দুস্তানের হিন্দুরা এদেশে ভাষা আন্দোলনের নামে উসকানি দিয়ে পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়।’ অ্যাড. ইউনুছ আলী সাথে সাথে এর প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে চরম বাগবিতণ্ডার ফলে সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়।