ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে দেশের ২১টি জেলায় বন্যা : ১৮ জনের মৃত্যু

 

স্টাফ রিপোর্টার: অব্যাহত বর্ষণ আর পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে বেড়েই চলেছে নদীর পানি। বিপদসীমার ওপরে উঠে ভাসাতে শুরু করেছে তীরবর্তী এলাকার লাখ লাখ মানুষকে। মাত্র একমাসের ব্যবধানে ফের বন্যাকবলিত হওয়ায় কষ্টের যেন শেষ নেই উত্তরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের। ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তা কিংবা বাঁধে অবস্থান করছে অসংখ্য পরিবার। আঞ্চলিক পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে আগামী কয়েকদিনে পানি আরও বাড়তে পারে।

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে দেশের ২১টি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার দেশের মধ্য, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর ২৫টি পয়েন্টে পানি বিদপসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। কয়েকটি জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। পানিবন্দি মানুষ ভীষণ দুর্ভোগ পোয়াচ্ছে। দুর্গত মানুষ শহর রক্ষা বাঁধ, স্কুল-কলেজসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশের সর্ববৃহত্ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রচণ্ড পানির চাপে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। উদ্ধার তত্পরতা চালাতে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। বন্যায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ দুই জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙে গেছে দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধসহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ। বন্যাজনিত কারনে জেলায় রোববার একই পরিবারের তিন শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।বাঁধ রক্ষায় ও বানভাসী মানুষকে উদ্ধারের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে। বাড়িঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জেলায় বন্যাজনিত কারণে পানিতে ডুবে, সর্প দংশনে এবং বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দিনাজপুরে বন্যাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯ জনে।

কাহারোল থানার ওসি মো. মনসুর আলী সরকার জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কাহারোল উপজেলার ঈশ্বরগ্রাম হতে কলার ভেলায় চড়ে পাশ্ববর্তী বিরল উপজেলার হাসিলা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিন সন্তান ও প্রতিবেশির এক সন্তানকে নিয়ে আসছিলো আবদুর রহমানের স্ত্রী সোনাভান বেগম। এ সময় কলার ভেলা উল্টে পানিতে পড়ে আবদুর রহমানের মেয়ে চুমকি (১৩), ছেলে শহিদ আলী (১০) ও সিয়াদ (৭) এবং প্রতিবেশি সাঈদ হোসেনের ছেলে সিহাদ (৭) মারা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার ৫৭ ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার বিকালে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামের কাঠালবাড়ী, রাজারহাটের কালুয়া ও ফুলবাড়ীর গোড়কমণ্ডল এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

লালমনিরহাটে সদর উপজেলার কলা গাছের ভেলায় ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় কুলাঘাট ইউনিয়নের পূর্ব বরুয়া গ্রামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং পরিবারের ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। গতকাল বিকেলে বডুয়া গ্রামের মোজাম্মেল হকের পরিবারের ৪ জন ভেলায় করে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছিলো এ সময় ধরলা নদীর প্রবল স্রোতে ভেলাটি ডুবে গেলে তারা নিখোঁজ হন। পরে নাদিমের (৮) লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় লোকজন। বাকি তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলেন- আব্দুল হামিদ, তার স্ত্রী আসমা বেগম, তার ভাই মোজাম উদ্দিন।

এদিকে পাটগ্রাম উপজেলায় বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে শিমুল হোসেন (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে এবং কচুয়ারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।