ভারী বর্ষণে উত্তর-পূর্বে বন্যার পূর্বাভাস

 

স্টাফ রিপোর্টার: তিস্তার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারায়ও পানি বাড়তে থাকায় স্বাভাবিক বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ রোববার বলেন, মাসের প্রথমার্ধ্বে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অববাহিকায় ভারী বর্ষণ হতে পারে। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিক বন্যার আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

ইতোমধ্যে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজানের ঢলও আসতে শুরু করেছে। কয়েকদিনে সিলেট, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট ও শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে অনেক পরিবার। বন্যার সঙ্গে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। দেশের নদীগুলোর ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে রোববার পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৩২টি পয়েন্টে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা-কুশিয়ারার পানি বাড়ছে। আরও পাঁচদিন পানি বাড়তে থাকবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় বিপদসীমার ওপরে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে উত্তরের কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দেবে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থা বিরাজ করছে। এই মাসে ১৬-২২ দিন বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সোমবারের পূর্বাভাসের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে। ভারী বর্ষণে স্বাভাবিক বন্যা হলেও এখন বন্যার তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন না বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ। তিনি বলেন, উজানে পানি বাড়তে থাকলে আমাদের এখানকার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। মাসের শেষার্ধের আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করবে সবকিছু।

তিনি জানান, গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের পর তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে দুই দফা ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল নামে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে উজান থেকে নামা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের ১৬টি জেলার ৫৯টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়।
প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে ভারি বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে গড়ে ২০-২৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় স্বাভাবিক মৌসুমী বন্যা এমনই হয়। তবে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত দেশে ও উজানে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে খারাপের দিকে যায় বন্যা পরিস্থিতি। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র একসঙ্গে ফুঁসে উঠলেই ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা থাকে।

২০০৭ সালে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছিলো।
২০১৩ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতে মাত্র ১০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ২০১৫ সালেও প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয় বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য।
গত কয়েক দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, তখন ৬৮ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গিয়েছিলো। ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্লাবিত হয়েছিলো ৬১ শতাংশ এলাকা।