ভারত ফেরত পাচ্ছে দাউদ মার্চেন্টসহ ১০ জঙ্গি-সন্ত্রাসীকেও

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের কারাগারে আটক ভারতীয় নাগরিক দাউদ মার্চেন্টসহ ১০ জঙ্গি ও সন্ত্রাসীকে ফেরত চাচ্ছে ভারত। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ফাইলও প্রস্তুত করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়া ও তার দু সহযোগীকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ভারতের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে। বাংলাদেশি যেসব অপরাধী ওই দেশের কারাগারে আটক আছে তাদের শিগগিরই ফেরত আনা হবে। আর বাংলাদেশের কারাগারে আটক ভারতীয় সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ নিয়ে সামনে আরো আলোচনা হবে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড নির্মূল করতে ভারত ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মাফিয়া দাউদ ইব্রাহিমের ভাতিজা দাউদ মার্চেন্ট প্রায় ৮ বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় মামলা আছে। মাস ছয়েক আগে জামিনে মুক্তির পর ফের কারাগারের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতের প্রযোজক গুলশান কুমার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। গ্রেফতার এড়াতে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। পরে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তাকে ফেরত নিতে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেছে। দাউদ মার্চেন্টের পাশাপাশি ভারতীয় জঙ্গি নেতা মুফতি ওবায়দুল্লাহ, আরিফ হোসেন ওরফে আরিফ, মাওলানা মনসুর আলী, আবু জাফর, মাওলানা হাবিবুল্লাহ, মাওলানা এবায়দুল্লাহ, মাওলানা হোসাইনও বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আছে। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কোলকাতার আরেক অপরাধী জাহিদ শেখকেও ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সূত্র জানায়, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করার আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের কাছে একটি তালিকা পাঠায়। ওই তালিকায় উল্লিখিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের নাম ছিলো। আগামী সোমবার ঢাকায় দু দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তাদের ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বাংলাদেশের কারাগারে আটক ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছি। তাদের ফাইল প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে অনেককেই ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। আর অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করার পরই নূর হোসেনকে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশে বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি আরেক উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়াও দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ছিলেন। এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনি। সূত্র জানায়, উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর পরেশ বড়ুয়ার ব্যাপারে তথ্য পায় পুলিশ। সে সময় মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত ছিলেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার বলেন, অনুপ চেটিয়া ঠাণ্ডা মাথার অপরাধী। তার জবানবন্দিতে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছিলো। পরেশ বড়ুয়ার নির্দেশেই তিনি বাংলাদেশে আসেন বলে স্বীকার করেছিলেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনুপ চেটিয়া বলেছিলেন, পরেশ বড়ুয়া ঢাকার মহাখালীর আরজতপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি (অনুপ চেটিয়া) গ্রেফতার হওয়ার পরপরই পরেশ বড়ুয়া বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতার সাথে পরেশ বড়ুয়ার সুসম্পর্ক আছে।