ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামা

This photo released on Sunday, Sept. 27, 2015 by the French Army Communications Audiovisual office (ECPAD) shows French army Rafale fighter jets flying towards Syria as part of France's Operation Chammal launched in September 2015 in support of the US-led coalition against Islamic State group. Six French jet fighters targeted and destroyed an Islamic State training camp in eastern Syria in a five-hour operation on Sunday, President Francois Hollande announced, making good on a promise to go after the group that he has said is planning attacks against several countries, including France. (French Army/ECPAD via AP) THIS IMAGE MAY ONLY BE USED FOR 30 DAYS FROM TIME TRANSMISSION.

 

সীমান্তে এখনো উত্তেজনা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বেসামরিক জনগণকে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: পাকিস্তান ভূখণ্ডে ঢুকে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। দুই দেশেরই সীমান্তের অনেক জায়গায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে গত পরশু রাত থেকেই।

পাঞ্জাবের ছয়টি জেলা থেকে গ্রামবাসীকে নিরাপদ দূরত্বে আগেই সরতে বলা হয়েছিলো। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলকে ফোন করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতপরশু জানান, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার দূরে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ের প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করতে। সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত সব স্কুল-কলেজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ভারতীয় সেনাদের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বা গোটা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে এ ধরনের কোনো সরকারি নির্দেশ না দেয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ নিজ-উদ্যোগেই সরে যাচ্ছে। পাকিস্তান থেকেও সেখানকার সীমান্তের কিছু এলাকা থেকে মানুষজন সরে যাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

এদিকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর পাকিস্তান দাবি করেছে সীমান্তে এ ধরনের কোনো অভিযান হয়নি। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত বলছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালানো হয় বুধবার রাতে, তারপর নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্য দিক থেকে গুলিবর্ষণ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি যেসব মানুষ থাকেন, তাদের একাংশের সাথে কথা বলে বিবিসি জানায়, দুই দেশের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। এর আগেও যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে, সেসব সময়ের কথা মনে করে বাসিন্দারা বলেছেন, গোলাবর্ষণ হলে সব থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে সীমান্তের মানুষদেরই পড়তে হয়। কখন কার বাড়িতে গোলা এসে পড়বে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে মরিয়া ভারত: আমেরিকার সাথে সবরকম সমন্বয় বজায় রেখে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে ভারত। শুধু তাই-ই নয়, এরপর ইসলামাবাদকে আরও কোণঠাসা করতে (কূটনৈতিক এবং কৌশলগত দুরকমভাবেই) ভারতকে নীরবে সাহায্য করছে ওয়াশিংটন। ভারতের সেনা অভিযান চলাকালীন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা ছিলেন ওয়াশিংটনে। সেখানে নির্ধারিত কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিশেষ বার্তা নিয়ে নয়াদিল্লি চলে এসেছেন তিনি। সরকারি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পাশাপাশি মার্কিন সিনেট যে ভাষায় গতকাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছে, তা সম্প্রতি অতীতে বিরল বলেই দাবি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সেনা অভিযানের পর যখন থমথম করছে সীমান্ত তখন কূটনৈতিকভাবে দুটি সুস্পষ্ট অক্ষ তৈরি হচ্ছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। ভবিষ্যতে যদি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের তীব্রতা আরও বাড়ছে (যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না) তবে এই বিভাজন আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই দ্বৈরথে যখন আমেরিকাকে পাশে নিয়ে চলছে নয়াদিল্লি ঠিক সে সময়ই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বিশেষ দূত পাঠিয়েছেন বেইজিংয়ে। মাখদুম খসরু বাখতিয়ার এবং আলাম দাদ লালেকা এই দুই প্রতিনিধি চীনা নেতৃত্বের সাথে বৈঠকও করছেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন। চীনা নেতৃত্ব জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের সাথে রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, চীনের কাছ থেকে এখনো এমন কোনো সরকারি বার্তা পাওয়া যায়নি, যার থেকে ধরে নেয়া যেতে পারে, তারা উরি হামলাকে সমর্থন করছে। বরং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংকট মোচনের পরামর্শই দিচ্ছে তারা। আগামী মাসে গোয়ায় ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তবে চীনকে তালিকায় না রেখেও, যে বিপুল আন্তর্জাতিক সমর্থন ভারত পাচ্ছে, তা পাকিস্তানের জন্য যথেষ্ট চাপের কারণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

বদলা নিতে পাল্টা হুমকি পাকিস্তানের: ইসলামাবাদের দাবি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, নয়াদিল্লি আসলে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এর ফলে মৃত্যু হয়েছে তাদের দুজন সেনার। তবে ভারতের আক্রমণের যোগ্য জবাব দেয়া হয়েছে বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আজ মন্ত্রিপরিষদের জরুরি সভা আহ্বান করেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তান সংবাদ মাধ্যমের দাবি, রাহিল শরিফ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভারতের তরফে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবি ভিত্তিহীন। তবে তিনিই পরে দেশের কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে জানান, পাকিস্তান এর বদলা নেবে। গোটা ঘটনাকে ভিত্তিহীন বললেও পাকিস্তানে সেনাপ্রধান কেন বদলার কথা বললেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রেডিও পাকিস্তানের খবর, ভারতের আঘাতের পরেই নওয়াজ শরিফ বলেন, পাকিস্তানের সেনা দেশকে রক্ষা করতে জানে। ভারতকে মোকাবেলায় তৈরি রয়েছে ইসলামাবাদ। শরিফের মন্তব্য, যদি সার্বভৌমত্বে আঘাত আসে, পাকিস্তান তার জবাব দেবে।

চীন ও ব্রিটেন চাচ্ছে আলোচনা: পাকিস্তান যদিও দাবি করেছে এ মুহূর্তে চীন তাদের পক্ষে আছে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে কাশ্মীর নিয়ে ঝগড়াটা কামানের গোলায় না উড়িয়ে আলোচনার টেবিলে বসেই মেটাক ভারত ও পাকিস্তান। বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে ভারত ও পাকিস্তান, দুটি দেশের সাথেই আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে বিষয়টা ভালোয়-ভালোয় মিটে যায়। দুটি দেশকেই সংযত হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমাদের আশা, দুটি দেশই আবার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মতবিরোধগুলো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থানকে আমরা মর্যাদা দিলেও চাইবো, উপমহাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে আবার হাত মিলিয়ে নেবে দুটি দেশ। ব্রিটেনও চাচ্ছে দুই দেশ আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করুক। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা দুটি দেশের কাছেই সংযত থাকার আর্জি জানিয়েছি। দুটি দেশের সাথেই আলাদা আলাদাভাবে কথাবার্তা চালিয়েও যাচ্ছি।