ভারতে মন্দিরে আতশবাজি বিস্ফোরণে নিহত শতাধিক

 

মোদীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন : মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা : আহত সাড়ে তিনশর বেশি

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতের কেরালা রাজ্যের কোল্লামের পারাভুর এলাকার পুত্তিঙ্গল দেবীর মন্দিরে আতশবাজির বিস্ফোরণে অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে তিনশর বেশি মানুষ। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উত্সবের জন্য জড়ো করে রাখা আতশবাজির গাদায় বিস্ফোরণের পর এই অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। গতকাল রবিবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

হিন্দুদের নববর্ষ উত্সব উপলক্ষে আতশবাজি জড়ো করা হয়েছিলো। বাংলাদেশের মতো কেরালার মানুষও আগামী ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণের উত্সব করবে। মালায়ালাম পঞ্জিকা অনুযায়ী, মেদাম মাসের প্রথম দিন এই উত্সব হয়, যার নাম বিশু। নতুন পোশাকে সেজে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই উত্সবে অংশ নেন। আর কেরালায় বিশু উত্সবে অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আলোকসজ্জা ও আতশবাজির প্রদর্শনী। এই উত্সব উপলক্ষে প্রায় ১৫ হাজার ভক্ত সেখানে হাজির হয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে মন্দির কমপ্লেক্সের একটি ভবন ধ্বসে পড়ার ফলেই বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের ফলে এক কিলোমিটার দূরবর্তী ভবনগুলোও কেঁপে কেঁপে ওঠে।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সকাল সাড়ে ৬টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন, শুরু হয় উদ্ধারকাজ। মারাত্মক দগ্ধদের পাঠানো হয় কেরালার রাজধানী থিরুভানানথাপুরামে। কেরালা পুলিশের প্রধান টিপি সেনকুমার গণমাধ্যমকে বলেন, অনেকের দেহ পুড়ে এতোটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে, সেগুলো আর চেনার উপায় নেই। পরিচয় শনাক্ত করতে তাদের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হবে। কেরালার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ চেন্নিথালা বলেছেন, এই মন্দিরে প্রতি বছরই বার্ষিক আতশবাজি উত্সব হয়। আমরা আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতভর বাজি ফাটানোর লড়াই চলছিলো। হঠাত্ই বাজির আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে মন্দির চত্বরে জমা করে রাখা বাজির স্তূপে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা মন্দির ও মন্দির চত্বরে। আতঙ্কে মানুষ দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দেয়। ততোক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান আরো বেশ কিছু মানুষ। বাজির বিস্ফোরণের তীব্রতা এতো বেশি ছিলো যে মন্দিরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে।

মন্দিরের আহতদের সেবায় নিযুক্ত করা হয় বার্ন কেয়ার স্পেশালিস্টদের। উদ্ধারকাজের জন্য পাঠানো হয় নেভি ও আধা সামরিকবাহিনী। উদ্ধারকার্যে গতি আনতে এয়ারফোর্সের ১০টি কপ্টার, মিগ ১৭ ও অত্যাধুনিক হালকা চপার ব্যবহার করা হয়। মন্দিরে হতাহতদের সহায়তা দিতে হেল্পলাইনও খোলা হয়। আহতদের শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পুলিশ মন্দিরের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মন্দিরের এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে আতশবাজি পোড়ানো নিয়ে পুলিশের কাছে আবেদনপত্র জমা দেননি মন্দির কর্তৃপক্ষ। পোড়া মৃতদেহের মধ্যে ৪০টি দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

ঘটনার ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছেন দেশবাসী। এই অগ্নিকাণ্ডে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেরালার একটি জনসভা বাদ দিয়ে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে যান প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেন তিনি। কোল্লামে খোলা হয়েছে অস্থায়ী মেডিকেল সেন্টার। দিল্লি থেকে বিশেষ ১৫ জন চিকিত্সকের বোর্ড পাঠানো হয়েছে কোল্লামে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চণ্ডীও ঘটনাস্থলে ছিলেন। প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি। কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার জন্য দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছে কংগ্রেস। মন্দিরের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শোক প্রকাশ করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি।