ভারতেনরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকারের সমর্থন পেতেপ্রতিযোগিতায়দু দল

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতেনরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকারের সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোনোপক্ষই পিছিয়ে নেই।ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা নাকি খালেদা জিয়াকে আগে অভিনন্দন জানাবেন তা নিয়েও তাড়াহুড়োর বিষয়টি সমালোচকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। অভিনন্দন বার্তা পাঠানোর পর মোদিকে টেলিফোনকরেন দেশের বৃহত দুটি দলের দু নেত্রী।

মোদির দিল্লির মসনদে যাওয়া নিয়ে সুবিধাজনক রাজনৈতিকবলয় তৈরি করবে তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরমধ্যে। দু দলের রাজনীতিতে দেশের কোনো বিষয় নয়, তাদের এ মুহূর্তের ইস্যুহয়ে উঠেছে ভারতের নতুন সরকার।বিদায়ী কংগ্রেস সরকার ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতনির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ফলেকংগ্রেস হেরে যাওয়ায় বিএনপির মধ্যে উল্লসিত ভাব দেখা গেছে। বিএনপি নেতারাআশা করছেন, শেখ হাসিনার সরকারের ওপর কংগ্রেসের মতো আশীর্বাদ থাকবে নাবিজেপির। যদিও দিল্লি ও ঢাকার কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা দু দেশের সম্পর্কে বড়পরিবর্তন হবে না বলেই মনে করছেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেবিজেপি সরকারের আনুকূল্য লাভে দু প্রধান দলের এহেন মরিয়া হয়ে ওঠা অনেকক্ষেত্রে স্বাভাবিক কূটনৈতিক রেওয়াজকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীরঅভিনন্দনের আগেই খালেদা জিয়ার অভিনন্দনের খবর গণমাধ্যমে চলে আসে। ভারতেরনতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার আগে শেখ হাসিনা চিঠি দিয়ে অতিশয়বিনীতভাবে মোদিকে বাংলাদেশে প্রথম সফর করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রীর মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানেরপ্রধানমন্ত্রীও মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে টেলিফোন করেছেন। কিন্তু ওই সব দেশেরকোনো রাজনৈতিক দল নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে টেলিফোন করেনি।

বিএনপিখালেদা জিয়ার অভিনন্দন বার্তা ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পৌঁছে দেয়ার পরদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বিএনপি নেতারামন্তব্য করেন, ভারতের জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী আসন্ন বিজেপি সরকারবাংলাদেশে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীনবর্তমান সরকারকে সমর্থন করবে না। বিএনপিমহাসচিব বলেছেন, বিজেপি বিজয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার নার্ভাস হয়ে পড়েছে।কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দনজানানোর রেওয়াজ আছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এমন অভিনন্দনজানানোর নজির সচরাচর চোখে পড়ে না। প্রতিবেশী দেশে সরকার গঠনের পরবাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এতটা আলোড়ন অতীতেও দেখা যায়নি।

শেখহাসিনার সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিএনপির বক্তব্যকে ইচ্ছাকৃত রটনাহিসেবে জবাব দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, বিজেপির সাথেও আগের সরকারেরধারাহিকতায় ভালো সম্পর্ক বজায় থাকবে। অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের প্রতিসাম্প্রদায়িক ঘেঁষা বিজেপি অটুট বন্ধুত্বে বিশ্বাসী হবে বলেই দলটির নেতাদেরধারণা।

মোদির সরকার শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথেই দিল্লিতেযাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারের একাধিক প্রতিনিধি দল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুলহাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এবং প্রধানমন্ত্রীরআন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে।দু প্রতিনিধি দল মোদির নতুন সরকারকে শুভেচ্ছা জানাবে এবং নতুন সরকারেরসাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করবে।

শেখ হাসিনা ভারতের ভাবীপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুধু নয়, চিঠি দিয়েছেন বিজেপি দলের সভাপতিরাজনাথ সিংকেও। এ চিঠি তিনি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে।
মোদিরবিরুদ্ধে ২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিযোগ আছে। ওই দাঙ্গায়প্রায় এক হাজার মুসলমান নিহত হন। তারপরও বিএনপি ও জামায়াত তাদের ইসলামঘেঁষা রাজনীতিকে ছাপিয়ে মোদির সমর্থনের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েযাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিএনপি কোনো প্রতিনিধি দল দিল্লিতে পাঠাবে কি-না তা অবশ্যএখনই স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতি মেরুকরণের এ ইঁদুর দৌড়কে বিজেপিকিভাবে নিচ্ছে জানতে চাইলে ভারতের অভিজ্ঞ কূটনীতিক দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মুচকুন্দ দুবে বলেন, আমি মনে করি, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কহওয়া উচিত দু দেশের সরকারের মধ্যে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে নয়। রাজনীতি হলবাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপর। বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, সেইসরকারের সাথেই ভারত সম্পর্ক রাখবে এটাই প্রত্যাশা করি। দলের সাথে সম্পর্কগড়া সরকারের নীতি হতে পারে না।