ভারতীয় দুনাগরিককে বাংলাদেশের নাগরিক বানানোর আরেক নয়া অপকৌশল

 

আলমডাঙ্গায় সম্প্রীতি কল্যা সমিতির নামে জালিয়াতিচক্রের পক্ষে মিথ্যা বিবৃতি প্রদানের অভিযোগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেয়া চক্রের পক্ষে আলমডাঙ্গা সম্প্রীতি কল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠনের মিথ্যা বিবৃতি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সংগঠন বিবৃতিতে ওই দুভারতীয়কে ঢাকায় বসবাসের কথা উল্লেখ করেছে, সেই একই সংগঠন তাদের একটি পুনর্মিলনী সংখ্যায় সমিতির সদস্যদের বর্তমান ঠিকানায় পুরুষোত্তমকে ভারতের দিল্লির ঠিকানা দেখিয়েছে। এভাবে সত্যকে কখনো মিথ্যার আড়ালে ঢেকে রাখা যায়না, সত্য বের হয়ে পড়েই উল্লেখ করে আলমডাঙ্গার বিশিষ্টজনেরা বিবৃতিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়ার কথাও উল্লেখ করেছে।

জানা গেছে,আলমডাঙ্গার শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে একটি জালিয়াতচক্র ভারতীয় দুনাগরিককে আলমডাঙ্গায় এনে তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করে ভোটার লিস্টে নাম অন্তর্ভুক্ত করান। তারা নানাভাবে জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এনিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাদের ভোটার লিস্টে নাম কর্তনের সুপারিশ করে চুয়াডাঙ্গা নির্বাচন অফিস ঢাকা প্রধান নির্বাচন অফিসে প্রেরণ করে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে ওই দুভারতীয়কে স্বশরীরে হাজির হওয়ার দিন ধায করলে ধার্য দিনের আগেই দুজন ভুয়া লোক জালিয়াতচক্র তাদের পুরুষোত্তম ও রাজারাম সাজিয়ে আদালতে হাজির করে। এ ঘটনায় আলমডাঙ্গার মানুষ ফুঁসে ওঠে। শুরু হয় নতুন করে আন্দোলন। গত ২২ আগস্ট আলমডাঙ্গাবাসীর ব্যানারে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে গিরিধারী লাল মোদীকে ও পৌর মেয়র মীর মহির বিচার দাবি করে। ওই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের সংবাদ পরদিন চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় আলমডাঙ্গার সম্প্রীতি কল্যাণ সমিতির নামে একটি প্রতিবাদ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশিত ওই প্রতিবাদ বিবৃতি মিথ্যা ভিত্তিহীন জালিয়াতচক্রের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি উল্লেখ করে ওই প্রতিবাদের পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, সাধারণসম্পাদক ইয়াকুব আলি মাস্টার, সাবেক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান ওউপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন।

প্রতিবাদে তারা উল্লেখ করেছেন, আলমডাঙ্গা সম্প্রীতি কল্যাণ সমিতির স্বয়ং সভাপতি ভারতীয় দু নাগরিকের এ দেশীয় প্রধান দালাল কুখ্যাত গিরিধারী লাল মোদীর আপন ভাই বিজয় লাল মোদী। সেকারণে ওই সংগঠনের পক্ষেই সম্ভব মিথ্যার বেসাতি করে দেশ বিরোধী চক্রান্তে জড়িত হওয়া।

প্রতিবাদে সম্প্রীতি কল্যাণ সমিতি উল্লেখ করেছে- ১. প্রহল্লাদ রায় পাডিয়া কখনোই ভারতে যাননি। আমৃত্যু বাংলাদেশে অবস্থান করেন।‘ ৭৯ সাল পর্যন্ত তারা পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। পরবর্তীকালে সামাজিক- রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে দখল করা হয়েছে তাদের সম্পত্তি। কিন্তু প্রকৃত সত্য কী তাই?আসল সত্য হলো ওই সম্পত্তি কেউ দখল করেনি। অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে প্রার্থিতদের সরকারিভাবে লিজ দেয়া হয়েছে। ’৭৯ সাল পর্যন্ত তারা যদি এ দেশে বাস করেন,তাহলে কীভাবে এ সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হলো?প্রকৃত সত্য হলো ওই পরিবার ৬৫ সালের যুদ্ধের সময় ভারতে পাড়ি জমান। ফলে ’৬৬ সালেই তৎকালীন পাকিস্থান সরকার ওই সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। ২. আলমডাঙ্গা সম্প্রীতি কল্যাণ সমিতি ২০০৯ সালে তাদের সমিতির পক্ষ ঠেকে পুনর্মিলনী স্মরণিকা প্রকাশ করে। তাতে সদস্যদের তালিকায় পুরুষোত্তম পাডিয়ার ঠিকানা ছাপা হয়েছে বিপি ২০, সালিমারবাগ, পশ্চিম নিউ দিল্লি। অথচপ্রতিবাদে উল্লেখ করেছে তারা কখনো ভারতে যাননি। তাহলে কোনটা বিশ্বাস করবে পাঠক?আসলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।৩. পুরুষোত্তম পাডিয়া ঢাকায় বসবাস করেন। তাহলে আলমডাঙ্গায় ভোটার লিস্টে নাম উঠাতে কেন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলো?সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিলো তিনি আলমডাঙ্গার পুরাতন বাজারে বসবাস করেন। প্রতিবাদকারীরা আরও উল্লেখ করেছেন, পুরুষোত্তম পাডিয়ারা দু ভাই যে ভারতের বিশিষ্ট নাগরিক তা প্রমাণের সকল তথ্য তাদের নিকট রয়েছে। সময়মতো আদালতে পেশ করা হবে।

এদিকে সম্প্রীতি কল্যাণ সমিতির এই মিথ্যা প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান,জাসদের জেলা আহ্বায়ক আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম সবেদ আলী,পৌর বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমানসহ বিশিষ্টজনেরা।