ভারতীয় জিরো অংশে নির্মিত হচ্ছে নতুন সড়ক

দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর চালু নিয়ে ধোঁয়াসা কাটছে?
এম আর বাবু: স্থলবন্দর কোথাই হচ্ছে? দর্শনার জয়নগর নাকি জীবননগরের চেংখালী? এ প্রশ্নে স্বচ্ছ জবাব না মিললেও দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া সড়কের ভারত অংশের শূন্য পয়েন্টে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। অপরদিকে দর্শনায় স্থলবন্দর স্থাপনের তোড়জড় চলছে বলে জোর প্রচারপ্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। ফলে স্থলবন্দর স্থাপন নিয়ে ধোঁয়াসা কাটছে না। যদিও দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া সড়কের শূন্য পয়েন্টে ভারত নির্মাণ কাজ শুরু করায় অনেকেরই অভিমত, ধোঁয়াসা বোধহয় এবার কাটছে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ অংশে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর উদ্বোধন করা হলেও গত প্রায় সাড়ে ৩ বছরেও ভারতীয় অংশে স্থল বন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়নি। ফলে উদ্বোধন করা হলেও দীর্ঘ দিনের চালু হয়নি স্থল বন্দরের কোনো কার্যক্রম। এর ফলে এ স্থল বন্দরটি চালু নিয়ে এলাকার মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াসা। দীর্ঘ দিন পর সেই ধোঁয়াসা কি কাটতে শুরু করেছে? প্রস্তাবিত এ স্থল বন্দরটি চালুর উদ্যোগে নিয়েছে ভারতীয় সরকার। এ উদ্যোগের প্রাথমিক অংশ হিসেবে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া আইসিপির সড়কের জিরো লাইনের ভারতীয় অংশে সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে ভারতীয় ঠিকাদারকে সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে টুঙ্গি থেকে গাজনা হয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক নবদ্বীপ পর্যন্ত রাস্তার কিছু অংশ প্রসস্ত করা হয়েছে এবং বাকি অংশও প্রসস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাস্টমসের জন্য টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্প ছেড়ে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানালেন ভারতের কেষ্টগঞ্জের অজয় সরকার। তিনি কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির একজন সদস্য।
ভারতীয় ঠিকাদার আনন্দ ব্যানার্জি জানালেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে ব্লক ডেভলপমেন্টের আওতায় কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি সীমান্তের এ রাস্তা নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। জিরো লাইন থেকে বিএসএফ গেট পর্যন্ত সাড়ে ৯ মিটার চওড়া ও ১৭৪ মিটার লম্বা এ সড়ক নির্মাণ করতে ২৯ লাখ ২২ হাজার ১৬৩ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সেন্ট্রাল গর্ভামেন্ট। এক মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে হবে। একটি এসকেভেটর, একটি রোলার, ৩টি ট্রাক্টর ও একটি ট্রাককে রাস্তা নির্মাণের কাজের সাথে জড়িত থাকতে দেখা গেছে।
কেন এ রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার আনন্দ ব্যানার্জী জানালেন, দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর চালুর উদ্দেশেই সেন্ট্রাল গর্ভামেন্ট এ রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি আরও জানালেন, সীমান্তের ওপাশে টুঙ্গি মোড় পর্যন্ত ১১ ফুট চওড়া রাস্তা রয়েছে। স্থল বন্দর চালু করতে যা আরও প্রসস্ত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ জন্য রাস্তার দু পাশে ৭ ফুট করে আরও ১৪ ফুট বাড়ানো হচ্ছে।
দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক জানালেন, গত ৫ মে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নদীয়ার কৃষ্ণনগর সফরে আসেন। তিনি কৃষ্ণনগর চেম্বারে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়কালে চেম্বারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর চালুর দাবি জানানো হয়। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের এ দাবির প্রেক্ষিতে তিনি ৭ দিনের মধ্যে প্রকল্প উত্থাপনের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের পর দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর চালুর সম্ভাবনার দুয়ার অনেকটা খুলে গেছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এ স্থল বন্দরের কার্যক্রম চালু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাহলে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থল বন্দর চালু নিয়ে যে আলো-আঁধারের খেলা চলছে তা-কি কাটতে শুরু করেছে। না-কি শুরু হচ্ছে নতুন আবার কোনো খেলা। এ প্রশ্ন জীবননগরবাসীর।