ব্র্যাক শিক্ষিকা রাশিদা হত্যায় পুলিশ কন্সটেবলকে অভিযুক্ত করে সিআইডির সম্পূরক চার্জশিট

No Image

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের আবাসিক হোটেল পারভীনায় ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকা রাশিদা পারভীনকে হত্যা মামলায় কামরুজ্জামান নামে এক পুলিশ কন্সটেবলকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযুক্ত কন্সটেবল কামরুজ্জামান খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রানাই গ্রামের মৃত মহর আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে।

মামলাসূত্রে জানা যায়, ১৫ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলিয়ারপুর গ্রামের হানেফ মণ্ডলের মেয়ে রাশিদা পারভীনের সাথে হাচানহাটি গ্রামের শামসুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। শামসুল ইসলাম পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য যান। এরপর থেকে রাশিদা পারভীন তার পিতার বাড়িতে থাকতেন এবং ব্র্যাকের স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। গত ২৮মে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরে কোতোয়ালী থানা পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর খবর পান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সেলিম একটি মামলা করেন। অভিযোগে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের আলিম ফকির হত্যার সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আলিম ফকির রাশিদা পারভীনকে উত্যক্ত করতো। তাকে ফুঁসলিয়ে যশোরে নিয়ে আসে এবং হত্যা করে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় আলিম ফকিরকে আটক করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জীজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে নিহতের মোবাইলফোনের কললিস্ট চেক করে হত্যাকাণ্ডের দিন ও এর আগে পরে একটি নম্বরে একাধিকবার কথা বলার রেকর্ড পায় পুলিশ। ওই নম্বরের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু মোবাইল নম্বরটি সাতক্ষীরার একজন হিন্দু মহিলার ছিলো। কিন্তু ফোনটি চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সদস্য কামরুজ্জামান ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে তার প্রতি নজরদারি শুরু করে পুলিশ। এরপর ২০১০ সালের ১১ জুলাই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে তাকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামরুজ্জামান ওই বছর ২২ আগস্ট চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু আদালত চার্জশিটের ওপর শুনানি শেষে স্বপ্রণোদিত হয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে জানতে পারেন কন্সটেবল কামরুজ্জামান সিন্দুরিয়া পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত অবস্থায় রাশিদা পারভীনের সাথে পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কামরুজ্জামান বিভিন্ন সময় তিনবার রাশিদা পারভীনকে যশোর নিয়ে আসেন এবং হোটেল পারভীনায় রাত্রিযাপন করেন। গত ২৮মে রাশিদা পারভীন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। তার আগে তিনি কামরুজ্জামানকে ফোন করেন। ওই দিন সকাল ৯টায় কামরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা থেকে বাসযোগে রাশিদা পারভীনকে নিয়ে যশোর আসেন। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে হোটেল পারভীনায় যান এবং ২ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। সেখানে অবস্থানকালীন রাশিদা পারভীন বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। রাশিদা পারভীন বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কামরুজ্জামান তাকে ফিরিয়ে এনে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে কামরুজ্জামান তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে সুযোগ বুঝে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। সর্বশেষ কন্সটেবল কামরুজ্জামনকে অভিযুক্ত করে এ সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া এজাহারনামীয় আসামি আলিম ফকিরকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।