ব্রাজিলীয়-আর্জেন্টাইনদের কেন এতো রেষারেষি?

স্টাফ রিপোর্টার: মেরুদণ্ডের চোটে বিশ্বকাপ শেষ নেইমারের। পর দিন আর্জেন্টিনাসমর্থকদের হাতে প্লাস্টিকের মেরুদণ্ড! আর্জেন্টাইনদের এ খোঁচা কেন সহ্যকরবে ব্রাজিলীয়রা?তারাও হাতের পাঁচ আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে বলে, আমরাপাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। জবাবে আর্জেন্টাইনরা দেখায় সাত আঙুল। জার্মানদেরকাছে ব্রাজিলের সাত গোল হজমের সে দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় ব্রাজিলীয় সমর্থকদের।কথা হলো, দুই দেশের সমর্থকদের কেন এতো রেষারেষি?

রিও স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রোনালদো হেলালপোস্ট-ডক্টরেট করেছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এই চিরদ্বৈরথ নিয়ে। অধ্যাপকহেলাল বিষয়টিকে ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘আর্জেন্টিনার আসল শত্রুতাচিলি, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ডের সাথে। ইংল্যান্ডের সাথে শত্রুতা ফকল্যান্ড দ্বীপনিয়ে। এদিক দিয়ে ব্রাজিলের অবস্থান চতুর্থ। অন্যদিকে ফুটবলে ব্রাজিলেরশত্রুতা উরুগুয়ের সঙ্গে। সেটি ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনালের কারণে। কিন্তু একটাসময় উরুগুয়ে পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারেনি। ব্রাজিলের তখননতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রয়োজন। এ কারণে সত্তরের দশকের পর থেকে আর্জেন্টিনাহয়ে উঠলো তাদের নতুন শত্রু।

সত্তর ও আশির দশকে ব্রাজিলের প্রতিআর্জেন্টিনার ছিলো গলায় গলায় ভাব। ১৯৭০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমসমর্থন করেছিলো ব্রাজিলকেই। ওই সময় আর্জেন্টিনার শীর্ষ পত্রিকা ক্লারিনপেলেকে প্রাবন্ধিক হিসেবে নিয়োগ করেছিলো। পেলে ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৬ ও ১৯৯০বিশ্বকাপে নিয়মিত কলাম লিখেছিলেন ক্লারিনে। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ নিয়ে একটাবইও প্রকাশ করেছিল ক্লারিন। অধ্যাপক হেলাল বললেন, ‘সেখানে (বই) পেলেকেউপস্থাপন করা হয়েছে রাজা হিসেবে আর ম্যারাডোনা তার উত্তরসূরি।

হেলালমনে করেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের রেষারেষির শুরু ১৯৯০ বিশ্বকাপথেকেই। ওই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্বে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারায় ম্যারাডোনারআর্জেন্টিনা। ব্যস, আর্জেন্টাইনরা তখন গান বাধে ব্রাজিল দেসিমে কুইয়ে সেসিয়েন্তে’ মানে ‘কেমন লাগছে ব্রাজিল, তুমি বল আমায়।’ ব্রাজিলিয়ানরা নাকিতাতে কেঁদে-কেটে একাকার। অতঃপর বলে, ‘পেলের চেয়ে ম্যারাডোনা সেরা।’ ওইম্যাচে ম্যারাডোনার পাসে দারুণ এক গোল করেছিলেন ক্লদিও ক্যানেজিয়া।এবিশ্বকাপে অবশ্য ব্রাজিলীয়রা গান তৈরি করেছে, ‘পেলের আছে হাজার গোল; ম্যারাডোনার হো হো হো।’ জেনে অবাক হতে হবে, এ রেষারেষি থেকেই ১৯৯৬ সালেআর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ক্রীড়া দৈনিক ‘ওলে’র জন্ম।পত্রিকাটির নীতি হচ্ছেব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করা।
দুটি দেশস্বাধীনতা লাভ করেছে দুই উপনিবেশ থেকে। ব্রাজিল ছিলো পর্তুগিজ আরআর্জেন্টিনা স্প্যানিশ উপনিবেশ। জাতি হিসেবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সম্পর্কখুবই শান্তিপূর্ণ। এ কারণে দু দেশের মধ্যে পর্যটনশিল্পও বেশ জমজমাট। এবারবিশ্বকাপেও প্রায় এক লাখ আর্জেন্টাইন এসেছে ব্রাজিলে। ব্রাজিলের কৌতুকঅভিনেতা হেলিও ডি লা পেনা বললেন, ‘এ দ্বন্দ্ব এখনো হাসি-তামাশার মধ্যেইসীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে এটি ক্রমেই সিরিয়াস হচ্ছে। মানুষ যখন বিষয়টিকে অতিগুরুত্বের সাথে নেবে, তখনই ভয়ংকর কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকবে।’

শোনাযাচ্ছে, আজ ফাইনালে অধিকাংশ ব্রাজিলীয় নাকি সমর্থন করবে জার্মানিকে।কোপাকাবানা সৈকতে যারা একরকম বুয়েনস এইরেস বানিয়ে দিয়েছে, সেইআর্জেন্টাইনরা ব্রাজিলের টিভিতে ব্রাজিলীয়দের উদ্দেশে উত্তেজিত বাইটদিচ্ছে, যারা তোমাদের সাত গোলের মালা পরিয়েছে, তাদের রোববার সাপোর্ট করছো?অধ্যাপক হেলালের মনে শঙ্কা কাজ করছে, দুই দেশের সমর্থকেরা আবার রক্তক্ষয়ীসংঘর্ষ জড়িয়ে না পড়ে। বললেন, ‘রোববার যা-ই হোক না কেন, সবই যেন শান্তিপূর্ণহয়।’

তবে এবার মনে ঝাল মিটিয়ে ব্রাজিলীয়দের খেপিয়েছে আর্জেন্টাইনরা।কারণটা নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে। ঘরের মাঠে জার্মানি ও হল্যান্ডের বিপক্ষেনাস্তানাবুদ। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা উঠেছে ফাইনালে। ২৪ বছরের ঝাল মেটানোর এইতো সুযোগ!