বেতন বেড়ে গেলে পদোন্নতি নয়!

 

স্টাফ রিপোর্টার: চতুর্থ গ্রেডে বেতন ভোগকারী কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারবেন না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করার পর বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের কথা হচ্ছে, ‘বেতন-ভাতা বেড়ে গেলে কি আমরা মর্যাদা পাব না? নানা কারণে বেতন বাড়তে পারে, কিন্তু মর্যাদা ভিন্ন বিষয়। একমাত্র পদোন্নতির মধ্য দিয়েই মর্যাদা বাড়ে।’ চতুর্থ গ্রেডে বেতন উত্তোলনকারী কর্মকর্তাদের উপসচিব হতে না পারার এ নিয়ম প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সাথে বাকি ২৭টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিদ্যমান বৈষম্য আরো বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপসচিব পদটি পঞ্চম গ্রেডের। আর চতুর্থ গ্রেড হলো উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার মাঝামাঝি একটি অবস্থান। প্রশাসন ছাড়া অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা যথাসময়ে পদোন্নতি পান না। সেই অপ্রাপ্তি ঘোচাতে সরকার সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল দিয়ে তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়। এভাবে ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ ব্যাচের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে চতুর্থ গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। তবে তারা ষষ্ঠ গ্রেডের পদ-পদবির কর্মকর্তা।

গত মাসে এক দফা পদোন্নতি দেয়ার পর সরকার নতুন করে উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন থেকে বিভিন্ন ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারের বিশেষ পদ উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে ইচ্ছুক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কর্মকর্তারা তাদের নাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেন। এই অবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়গুলোকে জানায়, চতুর্থ গ্রেডে যারা পৌঁছে গেছেন, তারা উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। ওই চিঠি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছার পর ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিষয়টিকে বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত করে ত্রয়োদশ বিসিএসের তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের কেউই প্রকৃতপক্ষে চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা নন। বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারের তফসিলভুক্ত চতুর্থ গ্রেডের পদের নাম সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর বা ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড। চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া না হলে তাদের লাইন পদে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেয়া হোক। কিন্তু তার আর কোনো সুযোগ নেই। লাইন পদে আমাদের পঞ্চম গ্রেডেই পদোন্নতি দেয়া হবে। পদোন্নতির জন্য বেতনের গ্রেড বিবেচ্য নয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রকৃতপক্ষে কোন গ্রেডের কর্মকর্তা সেটাই বিবেচ্য বিষয়। যদি এ সিদ্ধান্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনড় থাকে তা হলে আমাকে ষষ্ঠ গ্রেডে থেকেই অবসরে যেতে হবে। বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পরবর্তী সময়ে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ত্রয়োদশ ব্যাচকে বিবেচনা করা না হলে ১৮তম ব্যাচকে বিবেচনা করতে হবে। এর ফলাফল হবে একই সার্ভিসে ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে অবস্থান করবেন, অথচ ১৮শ ব্যাচের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেডে চলে যাবেন। অর্থাৎ সিনিয়র হয়ে যাবেন জুনিয়র। এটি চাকরির স্বাভাবিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী, যা তথ্য চাকরিতে এর আগে আর ঘটেনি। সার্বিকভাবে একটি ব্যাচের কর্মকর্তারা সরকারের উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।’ প্রয়োজনীয় পদ না থাকার পরও প্রশাসন ক্যাডারে পদোন্নতি দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সুপার নিউমারারি পদ সৃজন করা হয়। কিন্তু বিসিএস ইকোনমিক, আনসার, পুলিশ, চিকিৎসা, প্রকৌশল, শিক্ষাসহ ২৭টি ক্যাডারে পদ না থাকলে পদোন্নতিও বন্ধ। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে অন্যান্য কাডারের চরম বৈষম্য রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। নতুন করে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়ম জারি হওয়ার পর বৈষম্য আরো বাড়বে বলে তারা মন্তব্য করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘যেসব কর্মকর্তার অর্থিক সুবিধা চতুর্থ গ্রেডে পৌঁছে গেছে, তাদের আমরা উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় রাখিনি। এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারির পর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বেশ কিছু আবেদন আসে। বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি।’