বেগুনের দামে নাভিশ্বাস : মরিচের দামেও ঝাঁজ

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের কাঁচা বাজারে ইফতারি সামগ্রীর দাম হঠাৎ চড়া

 

স্টাফ রিপোর্টার/মেহেরপুর অফিস: বাজারে বেগুনের দাম শুনেই চমকে উঠেছেন অধিকাংশ রোজাদার ভোক্তা সাধারণ। ২৫/৩০ টাকার বেগুন একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি দাম শুনে অধিকাংশই সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও শেষ পর্যন্ত তেমন দাম কমেনি। অনেকেই বলেছেন, বেগুনির বদলে ইফতারিতে পেপেগুনি বা অন্য কিছু খেলেও কাঁচা মরিচের স্বাদ মেটাবো কিসে? ঝালের দামে যে ঝাঁজ তাতে ওদিকেও তো তাকানোর জো নেই। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম গতকাল পর্যন্ত মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার বাজারে অনেকটাই স্থিতিশীল ছিলো বলে জানা গেছে। শুধু ইফতারি সামগ্রীর দাম বেড়েছে মাত্র এক দুদিনের ব্যবধানে। অপরদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ইফতারির দোকানে চুয়াডাঙ্গায় তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। এ কারণে ইফতারি সামগ্রী সাজিয়ে বসা দোকানিদের অনেকেই খানেকটা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রথম রোজার দিনেই যে লোকসান, তাতে দ্বিতীয় দিনে ভাজাপোড়া করবো কোন সাহসে? বুঝতে পারছি না।

রমজানের আগের দিন ও প্রথম রমজানের দিন চুয়াডাঙ্গার বড়বাজার (নিচের বাজার), কেদারগঞ্জবাজার (নতুন বাজার) ও রেলবাজার কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানে ইফতারি হিসেবে বেশি ব্যবহার্য্য বেগুন, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ও ক্ষীরার দাম বেড়েছে সব চেয়ে বেশি। অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও তা একেবারে লাগাম ছাড়া নয়। সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তরা অভিযোগ করে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র রমজানের মাসে সিন্ডিকেট ও কৌশল করে কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। তা না হলে বেগুনের দাম একদিনে দ্বিগুণের বেশি হলো কীভাবে? গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা নিচের বাজারে আড়তে বেগুন বিক্রি হয়েছে ২০-৩০ টাকা কেজি। ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই বেগুন কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। ১৫-২০ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। ১০০ টাকা কেজির ধনেপাতা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এ ব্যাপারে গতকাল ১ রমজানের দিন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার বলেন, পাইকারি বাজারে তেমন দাম বাড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা ব্যাপকহারে দাম বাড়িয়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে বলেন, আড়ত থেকে বেশি দামে মাল ক্রয় করে তো লসে বিক্রি করতে পারি না। যেমন কেনা তেমন বিক্রি। আমাদের দোষ কোথায়।

অপরদিকে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে আখের গুড়, আলু, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সয়াবিন তেলের দাম। এছাড়া সব ধরনের মাছ কেজিতে ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাছব্যবসায়ী বলেন, বাজারে যে সব শিং, টেংরা ও মাগুর মাছ বিক্রি হচ্ছে দেশি মাছ বলে তার বেশির ভাগই চাষ করা মাছ। কায়দা করে দেশি মাছের মতো তৈরি করা হচ্ছে যা বোঝা খুবই কষ্টকর। তবে এ সব শিং, মাগুর, টেংরার দাম কেজি প্রতি দেশি মাছের মতো ৫০০-৮০০ টাকা, ক্ষেত্র বিশেষে ১০০০ টাকা কেজিও বিক্রি করা হচ্ছে। চাষ করা মাছ দেশি বলে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে বেশি দামে বিক্রি করছেন চুযাডাঙ্গা রেলস্টেশন সড়কের মাছের আড়তপট্টির কয়েকজন আড়তদার। এ বিষয়ে অনেকে প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করেছেন।

এদিকে মেহেরপুরের সবজি বাজারে রমজানের প্রথম দিনে আগুন লেগেছে। বাজারে বেগুনের মূল্য দু থেকে তিনগুণ বেড়েছে। শসার দামও প্রায় ৩ গুণ হয়েছে। পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। রমজানের প্রথম দিনে বেগুনের দাম পূর্বের দামের সাথে প্রায় ৪০ টাকা যোগ হয়েছে। শসার দামও এক লাফে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। যে বেগুন রোজার আগে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই বেগুন রোজার প্রথম দিনে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে শসার দাম রোজার আগে ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই শসার দাম রমজানের প্রথম দিনে ৩৬ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেহেরপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা বললেন- কাঁচা বাজারের প্রায় সব জিনিসের দাম কিছু কিছু বেড়েছে। তবে বেগুন আর শসার দাম সব চেয়ে বেশি বেড়েছে। কাঁচা ঝাল রোজার আগে ৫/৬ টাকা কেজি দরে কিনতাম। প্রথম রোজায় ২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা ঝাল কিনেছি। পাইকারি বেশি দামে কিনলে বেশি দামে তো বিক্রি করতে হবে।