বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে পুলিশি অভিযান অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃস্পতিবারও চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থনে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- প্রতিরোধে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটানোর পাশাপাশি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতেই কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৭ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাজারপাড়ার মোতালেব হোসেন ওরফে হেলা ডাক্তারের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩৫), হাউলী ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা তারানিপুরের আবু বকর মালিথার ছেলে রকিবুল হাসান তোতা (৩৬), জগন্নাথপুরের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে ছাত্রনেতা ইমান আলী (৩২), যুবদল নেতা হেমায়েতপুর গ্রামের মৃত মুনছুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), চিৎলা গ্রামের কানন ম-লের ছেলে বকুল (৪৭), বিএনপি নেতা হেমায়েতপুরের শওকত আলী (৪০) এবং দলিয়ারপুরের মৃত আমির হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৫২)।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার আদালত কর্তৃক মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে জীবননগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও রাজপথে দেখা মেলেনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের। শহরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের পৃথক মিছিল করতে দেখা গেছে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ হুইপ গ্রুপের নজরুল মল্লিকের নেতৃত্বে এ মিছিল বের করা হয়।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে জীবননগর থানা পুলিশের চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে উপজেলার মেদিনীপুর গ্রামের রবিউল বিশ^াসের ছেলে সীমান্ত ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি ওয়াহেদ বিশ^াস, সীমান্ত ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির আতিয়ার রহমান, গয়েশপুর গ্রামের রায়হান উদ্দিনের ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ জাহাঙ্গীর রাজা, কাশিপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে বিএনপিকর্মী মিলন হোসেন ও বকু-িয়া গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার মামলায় রায়কে ঘিরে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি, পৌর বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমানের গোবিন্দপুরস্থ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি টিম গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি (অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস গ্রুপ) আলহাজ মজিবর রহমানের গোবিন্দপুরস্থ বাড়িতে। সে সময় মজিবর রহমানসহ পৌর বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টুকে আটক করে। পুলিশের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত বছর ১০ জুন রাত দেড়টায় উপজেলার পাঁচলিয়া গ্রামের সারজেদ আলী মালিথার ছেলে মাওলানা সাইফুল ইসলামের বাড়িতে বসে উপজেলা বিএনপির গ্রেফতারকৃত ৩ শীর্ষ নেতা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও নাশকতা সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মঘাতীমূলক ধ্বংস করার পাঁয়তারা করে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার তাদেরকে গ্রেফতার করেছে।
আটক নেতৃবৃন্দ ও তাদের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান ডান পা কেটে রক্তাক্ত হয়েছেন। সন্ধ্যায় তাকে দেখতে গিয়েছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময় পুলিশ তাদেরকে আটক করেছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, পুলিশের বিশেষ অভিযানে মেহেরপুর তিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৮জন ও অন্যান্য মামলার ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার ভোর রাতে এ অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে সদরে ৮ জন, মুজিবনগরে ৮ জন ও গাংনী থানায় ৩ জন রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় বিশেষ অভিযানে এদের আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ৮জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত বাকিরা বিভিন্ন মামলার আসামি। তিনি আরও জানান, যাচাই-বাছাই শেষে আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।