বিয়ের বছর না ঘুরতেই লাশ হলো রুমা

যৌতুক দিতে না পারায় দরিদ্র পিতা হারালেন তার মেয়েকে

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: বিয়ের বছর না ঘুরতেই লাশ হলো রুমা খাতুন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত ৯টার দিকে রুমা খাতুন মারা যায়। তার মৃত্যুর পর প্রশ্ন ওঠে, বাল্যবিয়ের বলি? নাকি স্বামী-শাশুড়ির যৌতুক দাবির কষাঘাত?

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হাজরাহাটির খান সাহেবের ছেলে রকিবুল ইসলামের সাথে আনুমানিক ১০ মাস আগে বিয়ে হয় আলমডাঙ্গা জেহালা গাভিপাড়ার লাল্টু রহমানের মেয়ে রুমা খাতুনের। রুমার বয়স ১৮ বছর বলে দাবি করা হলেও অপ্রাপ্ত বয়সেই তাকে যে বিয়ের আসনে বসানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান। বিয়ের সময় যৌতুকের দাবি না থাকলেও কিছুদিনের মাথায় স্বামী রাকিবুল ও তার মা চায়না খাতুন যৌতুক দাবি করেন। বিয়ের তিন মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে রুমাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি কৌশলে নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে রুমা তার পিতার বাড়ি ফেরেন। স্বামী-শাশুড়ি ৬০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করলে রুমার পিতা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিচ্ছেদ প্রসঙ্গ সামনে আনেন স্বামী রাকিবুল। আগামী শুক্রবার বিচ্ছেদ হবে বলে জানালে- রুমা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে গতপরশু রোববার সকালে পিতার বাড়িতেই বিষপান করে রুমা। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার একপর্যায়ে গতরাত ৯টার দিকে মারা যায় রুমা। মৃতদেহ গতরাতেই নেয়া হয় তার পিতার গ্রাম জেহালায়। রাতেই দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

বিয়ের বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে কেন? রুমার পিতা বলেন, আমরা গরিব। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। বিয়ের প্রস্তাব এলো। দাবি-দাওয়া নেই শুনে বিয়ে দিলাম। বিয়ের তিন মাসের মাথায় রাকিবুল ও তার মা চায়না খাতুন কখনো এক লাখ টাকা, কখনো ৬০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করতে শুরু করলো। স্বামীর বাড়িতে নির্যাতনের মুখে মেয়ে বাড়ি ফিরলো। স্বামীর সংসারে ফিরতে হলে যৌতুকের টাকা লাগবে। টাকা দিতে পারলাম না বলে মেয়ের সংসার টিকবে না বলে জানালো। এ কারণেই মেয়ে আত্মহত্যা করলো। একজন পিতা হয়ে এ কষ্ট সইবো কীভাবে? রুমার পিতার এ প্রশ্নের জবাব এখন কে দেবেন?