বিসিএস পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে দুই পরীক্ষক

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিসিএস পরীক্ষার উত্তরপত্র সঠিকভাবে দেখা হচ্ছে না- এমন অভিযোগ তুলে পরীক্ষার্থীরা তা পুনর্মূল্যায়নের দাবি করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিএসসি প্রথমবারের মতো বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দুইজন পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা যায়, ৩৮তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দুইজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। পরীক্ষকদের দেয়া নাম্বারের ব্যবধান ২০ এর বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষক উত্তরপত্র দেখবেন। তবে বিশিষ্টজনরা বলছেন, বিসিএস অনেক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এখানে এক-দুই নাম্বারেই শিক্ষার্থীদের ভাগ্য বদলে যায়। ফলে দুই পরীক্ষকের দেয়া নাম্বারের ব্যবধান ১০ এর বেশি হলেই তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা দরকার। না হলে অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চনার শিকার হবেন। এছাড়া পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নেরও বিধান চালু করা প্রয়োজন। কারণ, পুনর্মূল্যায়নের নিয়ম থাকলে পরীক্ষকদের মাঝে আরও বেশি সচেতনতা কাজ করবে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি যৌক্তিক কারণে বিসিএস পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেন, তাহলে তাকে সে সুযোগ দেয়া উচিত। তবে এজন্য একটা যৌক্তিক নিয়ম থাকতে হবে। যাতে ঢালাওভাবে সবাই পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে না পারেন। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মকমিশনের যে কোনো বিষয় সংস্কার বা পরিবর্তনের জন্য কয়েকজন নীতিনির্ধারকের যেটা ভালো লাগল সেটাই করা ঠিক নয়। এজন্য পিএসসির আগে একটা খসড়া তৈরি করা উচিত। এরপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া দরকার। সম্ভব হলে আন্তর্জাতিকভাবে একাধিক উন্নত রাষ্ট্রের নিয়মনীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, পিএসসিকে আরও মনে রাখতে হবে যে, কোনো পরীক্ষার ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা পিএসসির সাংবিধানিক দায়িত্ব।  জানা যায়, ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পিএসসির কাছে তাদের বঞ্চনার অভিযোগ করেছিলেন। এরপর পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে পিএসসি কর্তৃপক্ষ তাদের লিখিত আবেদন করতে বলেন। কিন্তু লিখিত আবেদন করার পরও এর কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান ৩৬তম বিসিএসের একাধিক বঞ্চিত শিক্ষার্থী। অতীতেও অনেকে ভালো পরীক্ষা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত নাম্বার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে গেলে রাষ্ট্রপতি দুজন পরীক্ষক দিয়ে বিসিএস পরীক্ষার খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়নের পরামর্শ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পিএসসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে ৩৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় বঞ্চিত শিক্ষার্থী ডা. ফারুক হোসেন  বলেন, অনেক ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও শতাধিক মেডিক্যাল শিক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এসব শিক্ষার্থীর সবার রোল নাম্বার ছিল পাশাপাশি। এদের মধ্যে কেউ উত্তীর্ণ হয়নি। এছাড়া আগের দুটি বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থী ৩৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। ফলে পিএসসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু পিএসসি তাদের ফল পুনর্মূল্যায়ন না করে কিছুদিন পর তাদের ফেসবুক পেজে লেখেন, বিসিএস পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ বিধিতে না থাকার ফলে ৩৬তম বিসিএসের পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না।
ডা. ফারুক হোসেন আরও বলেন, ৩৪তম বিসিএসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে পুনর্মূল্যায়ন করে পিএসসি। অথচ তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বলেছে, বিধির কারণে ফল পুনর্মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে পিএসসি ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করেছে তা জানাতে হবে। তিনি বলেন, তাদের মূল দাবি পূরণ না করে ৩৮তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দুইজন পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরীক্ষকদের দেয়া নাম্বারের ব্যবধান ২০ এর বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন। এটাও কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসাইন বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় এক-দুই নাম্বারেই শিক্ষার্থীদের ভাগ্য বদলে যায়। ফলে দুই পরীক্ষকের দেয়া নাম্বারের ব্যবধান ১০ এর বেশি হলেই তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া বিসিএস পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা অনেক জরুরি। এজন্য শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের এক প্রজ্ঞাপনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘লিখিত পরীক্ষার সকল উত্তরপত্র গোপনীয় দলিল হিসেবে গণ্য হইবে এবং কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রার্থী বা তাহার প্রতিনিধিকে উহা প্রদর্শন করা যাইবে না। উত্তরপত্র পুনঃপরীক্ষণের কোনো আবেদন বিবেচনা করা হইবে না, তবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা প্রদানপূর্বক কোনো প্রার্থী কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষার নাম্বারপত্র প্রাপ্তির জন্য পরীক্ষানিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) বরাবর আবেদন করিতে পারিবেন। একইভাবে প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষার নাম্বারও গোপনীয়তার বিষয়ে বলা হয়েছে।’ বিসিএস পরীক্ষার ফল পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, বিধিতে এমন কিছু নেই যে তারা পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবেন। এছাড়া এভাবে যদি পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়, তাহলে এক বিসিএস শেষ করতেই অনেক সময় লেগে যাবে। তবে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র আগে একজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করতেন। ৩৮তম বিসিএস থেকে দুইজনে মূল্যায়ন করবেন। এরপর পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্ত নাম্বারও দেখতে পারবে।
২০ এর নাম্বারের ব্যবধান সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, এটা কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়। তারা যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে দ্বিতীয় মূল্যায়নই ছিল না, তারা সেটা চালু করল। আর তাদের একটা স্টান্ডার্ডের মধ্যে থাকতে হয়।