বিষ্ণুপুরে জমে উঠেছে মধ্যবয়সী রোজিনার আস্তানা: কুয়েতি জিনের নাম জয়নাল মণ্ডল

 

স্টাফ রিপোর্টার: কুয়েত থেকে আসে জিন। সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবারে ভর করে দামুড়হুদা বিষ্ণুপুরের রোজিনা খাতুনের ওপর। সব রোগের চিকিৎসা তো দেয়-ই, সকল দেশে যাওয়ার ভিসাও দিতে পারে কুয়েতি ওই জিন ভর করা মধ্যবয়সী রোজিনা। বানোয়াট এসব প্ররোচণায় পেতে বসা রজিনার আস্তানা বেশ জমে উঠেছে।

রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে কতোজন যে প্রতারিত হচ্ছে তার ইয়েত্তা নেই। ভিসা নেয়ার জন্য কুয়েতি জিনভরা করা রোজিনার কাছে ঘুরে ঘুলে অনেকেই হয়রান। জিনের দেয়া ভিসা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর কয়েকজনের ঘোর কেটেছে। তারাই অভিযোগ করে বলেছে, কয়েক মাস ধরে ঘুরছি। রোজিনার দরবারে প্রথমে ফি ১১ টাকা। দাওয়ায় নিতে লাগে ৫১ টাকা। আর রোগ যদি জটিল হয়, তাহলে তো কথাই নেই। হরেক রকমের খরচের অজুহাত দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় কাড়ি কাড়ি টাকা।

কতোদিন ধরে চলছে এ বাণিজ্য? স্থানীয়রা বললেন, বহুদিন ধরেই আব্দুল জলিলের স্ত্রী রোজিনা জিনভর করার কথা বলে চিকিৎসা দেয়। কিছুদিন ধরে প্রচার প্রচারণা বেড়েছে। বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। শুধু কী চিকিৎসা? ভিসার জন্যও অনেকে ধর্ণা ধরে রোজিনার কাছে। দীর্ঘদিন ধরে তার ওপর ভর করা কুয়েতি জিন বিদেশে যাওয়ার ভিসা দিতে পারে বলে প্রচার করলেও এখন পার্যন্ত একজনেরও ভিসার ব্যবস্থা করতে পারেনি রোজিনা। ফলে প্রতারিতদের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রোগীও বাড়ছে। কারণ কিছু মহিলা রয়েছে যারা ওই রোজিনার ওপর ভর করা জিনের গুণকীর্তনে ব্যস্ত। ওই মহিলারা অবশ্য কোনো কমিশন পান কি-না তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।

গতকাল শুক্রবার রোজিনার দরবারে পৌঁছে পাওয়া যায় নানা নাটকের দৃশ্য। সামনে পরে আছে বেশ কিছু ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ওষুধ ও ধর্মীয় বই। রোজিনার ছবি তুলতেই সে গরম চোখে তাকায়। ভান করেন তার ওপর কুয়েতি জিন ভর করেছে। রোজিনার মুখ দিয়ে কুয়েতি জিন বলে, আমার নাম জয়নাল মণ্ডল। পিতার নাম মৃত মিজানুর মাস্টার। কুয়েতের বাবুরপুরে আমার বাড়ি। বাংলাদেশ সরকারও আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করেছে। পারেনি। তোমরাও পারবে না।

এসব কথা বলার মাঝে কুয়েতের একটি শহরের নাম বলতে বলা হলে, কুয়েতি জিন নীরব হয়ে যায়। রোজিনার আচরণও বদলাতে থাকে। রজিনা সটাং শুয়ে পড়ে বোঝায় জিন চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর রোজিনা স্বাভাবিক হওয়ার ভান করে। তখন আর কিছুই বলেনি। রোজিনার নীরবতার মাঝে তার লোকজন দরবার ফাঁকা করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইব্রাহিমপুর স্কুলপাড়ার আনিছুর রহমানের ছেলে ওয়াসিম জানান, কুয়েতি জিন বিদেশে যাওয়ার ভিসা দিতে পারে শুনে এখানে এসেছিলাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ভিসার ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানালেও তিন মাস পার। ভিসার জন্য রোজিনার হাতে এক হাজার টাকাও তুলে দিতে হয়েছে। এরকম অনেকেই আছে, যারা মাঝে মাঝেই রোজিনার বারে এসে হতাশ হয়ে ঘুরে যায়।

স্থানীয় যুবসমাজ বলেছে, জিনের কথা বলে রোজিনা যেভাবে মানুষ ঠকাচ্ছে তা বর্ণনা করাও কঠিন। এ ধরনের প্রতারণার আস্তানায় সরল-সোজা মানুষগুলো এসে প্রতারিত হলেও প্রতিকারের তেমন উদ্যোগ নেই। গ্রামের মাতবরদের তেমন কেইই কিছু বলেন না। সচেতনরা নীরব দর্শক, সুযোগ পেয়ে রোজিনার দোকান বেশ ভালোই জমেছে।