বিষাক্ত উপাদান মিশ্রিত প্যারাসিটামল খেয়ে প্রাণ হারিয়েছিলো ৭৬ শিশু : ২১ বছর পর মামলার রায়

 

ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরি করা কোম্পানির মালিকসহ তিনজনের ১০ বছর জেল

স্টাফ রিপোর্টার:ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির অভিযোগে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক ডা. হেলেন পাশাসহ তিনজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের অতিরিক্ত প্রত্যেক আসামির ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের ২১ বছর পর আসামিদের সাজা দেয়া হলো। বিষাক্ত উপাদান মিশ্রিত প্যারাসিটামল খেয়ে প্রাণ হারিয়েছিলো ৭৬ শিশু।

যদিও মামলাটি ১৯৯৩ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ছিলো। পরে বিচার চালু হলে চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের চৌধুরী ১৯৯৩ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকার ড্রাগ আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মিজানুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত উৎপাদন কর্মকর্তা নৃগেন্দ নাথ বালা। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬সি ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ দণ্ড দেয়া হয়।এছাড়া অন্য দু আসামি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের ছেলে আজফার পাশা ও মান নিয়ন্ত্রক মো. নোমানের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ ও ড্রাগ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যালোচনায় বিচারক বলেন, ভেজাল প্যারাসিটামল ওষুধ তৈরি করা সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়া উচিত।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে নৃগেন্দ নাথ বালা পলাতক রয়েছেন। হেলেন পাশা ও মিজানুর রহমান জামিনে থেকে আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত দু আসামি মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ঢাকা শিশু হাসপাতালের তৎকালীন প্রফেসর মো. হানিফ তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৯৯২ সালের আগে থেকেই কিছু শিশু কিডনিজনিত সমস্যা নিয়ে আসে এবং কিছু শিশু কিডনি ছাড়া অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আসে। সে সময় আমরা দেখতে পাই যে, কিছু শিশু হাসপাতালে আসার পর কিডনি ফেইলিউর হচ্ছে। বিষয়টি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কিডনি ফেইলিউরের কারণ বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি জানতে পারে, অনেক শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং পরে মৃত্যুবরণ করছে অথচ তাদের এ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। আমরা ওষুধ প্রশাসন এবং পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে অবহিত করি। প্যারাসিটামল সিরাপের নমুনা পাঠাই। যে শিশুদের হাসপাতালে শুধু প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো হয় তাদের ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলিউর হওয়ার ঘটনায় আমাদের সন্দেহ হয় যে, ব্যবহৃত সিরাপে কোনো সমস্যা আছে। এ বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরবর্তীকালে শিশু হাসপাতাল থেকে পাঠানো প্যারাসিটামল সিরাপের স্যাম্পল ওষুধ প্রশাসন এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন কর্তৃক পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে ওই সিরাপে প্র্রোপাইলিন গ্লাইকল’র পরিবর্তে ডাইডিহাইলিন গ্লাইকন পাওয়া যায়, যা ক্ষতিকারক এবং বিষাক্ত। আর এটাই শিশু মৃত্যুর কারণ।’