বিশ্বে বছরে ৯০ লাখ যক্ষ্মা রোগী ৩০ লাখ চিকিত্সার বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বে প্রতি বছর ৯০ লাখ মানুষ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে ৩০ লাখ রোগীই চিকিত্সাসেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যা মোট যক্ষ্মারোগীর এক-তৃতীয়াংশ। আর প্রতি বছর এ রোগে মারা যায় প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। ৪০ ভাগ যক্ষ্মারোগীর বাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। যক্ষ্মারোগীর মধ্যে ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন নারী এবং মোট আক্রান্তদের মধ্যে ২২ শতাংশ রোগী এইচআইভি পজিটিভ বলে জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা কিছুটা বাড়লেও এখনো শতভাগ সাফল্য আমরা অর্জন করতে পারি নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতি লাখে ৪৩ জন মানুষ যক্ষ্মারোগে মারা যাচ্ছে। এ হিসেবে এ রোগে বছরে মোট মারা যায় ৬৪ হাজার মানুষ। বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত এবং মারা যাওয়ার হার বেশি হওয়ার বড় কারণ অসচেতনতা। যার মূলে রয়েছে- পুষ্টিহীনতা, শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার, চিকিত্সার অভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্য এবং যক্ষ্মার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। দরিদ্রদের মধ্যে যক্ষ্মার প্রবণতার মূল কারণ হলো তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যক্ষ্মা বিস্তার লাভ করে। তবে দেশে একসময় যক্ষ্মা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রোগ হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখন নানা ধরনের ওষুধ সহজলভ্য হওয়ায় ছয় মাসের মধ্যেই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ রোগ হওয়ার বড় কারণ তামাক সেবন। ক্যান্সার আক্রান্তদের শতকরা ৭০ ভাগ তামাক সেবনজনিত কারণে হয়ে থাকে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি সচেতনতা আরো বাড়াতে পারলে দেশ থেকে এ রোগ বিদায় নেবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

যক্ষ্মা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ ২৪ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- যক্ষ্মা খুঁজবো ঘরে ঘরে, সুস্থ করবো চিকিত্সা করে। এ বছর দিবসটির লক্ষ্য হচ্ছে- যক্ষ্মাজনিত অসুস্থতা, যক্ষ্মায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হার এমন পর্যায়ে কমিয়ে আনা, যাতে যক্ষ্মা আর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত না হয়। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। শোভাযাত্রা, বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান, জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, যক্ষ্মা উন্নয়নশীল বাংলাদেশের অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা এবং দ্বিতীয় ঘাতক ব্যাধি। বিশ্বের যক্ষ্মাক্রান্ত ভয়াবহ ২২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আশাব্যঞ্জক হলেও এখনো এমডিআর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মানুষই যক্ষ্মায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

ব্র্যাক টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিষ্ট ডা. কাজী আল মামুন সিদ্দিকী বলেন, এবারে যক্ষ্মা দিবসের বার্তা হবে- সেবা বঞ্চিত যক্ষ্মারোগী খুঁজে বের করা, দরিদ্র, যারা অপুষ্টিতে ভুগছে, এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত, শিশু ও নারী, উদ্বাস্তু, শ্রমিক, বস্তিবাসী এবং যারা মাদকসেবী রয়েছে তাদের মধ্যে যক্ষ্মারোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত শনাক্ত ও চিকিত্সার আওতায় আনা। তিনি বলেন, যক্ষ্মা একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা, এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং যক্ষ্মা বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সকল সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিত্সার প্রয়োজনে সৃজনশীল কৌশলের বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

বিনামূল্যে যক্ষ্মার সেবা: যক্ষ্মা শনাক্তকরণে কফ পরীক্ষা ও চিকিত্সা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায়। গরিব রোগীদের এক্স-রে ও অন্যান্য পরীক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া। যক্ষ্মারোগীকে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বাস্থ্যসেবিকার সামনে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক মাত্রায়, পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ খাওয়ানো হয়।

যক্ষ্মারোগের চিকিত্সা প্রাপ্তিস্থান: সরকার যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের জন্য কফ পরীক্ষা ও এর চিকিত্সা বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। জেলা সদর হাসপাতাল, সকল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, ৪টি বিভাগীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা। সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, কারাগার, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং বিজিবি, পুলিশ ও আনসার পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে এ চিকিত্সা বিনামূল্যে দেয়া হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু এনজিওতে এ সেবা দেয়া হয়।