বিশ্বকাপ : শেষ চারের কঠিন লড়াই শুরু হচ্ছে কাল : ধ্রুপদী বনাম পাউয়ার ফুটবল

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর:বিশ্বকাপফুটবলের সেমিফাইনাল নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। কঠিন লড়াই হবে চারদলের মধ্যে। শেষ চারেও ধ্রুপদি আর পাওয়ার ফুটবলের লড়াই দেখবে দর্শক।মুখোমুখি হবে ল্যাটিন আমেরিকা আর ইউরোপের চার দল। লড়াই হবে শেয়ানেশেয়ানে। কোনটা টিকবে ধ্রুপদি ফুটবল না পাওয়ার ফুটবল?তার জন্য অপেক্ষাকরতে হবে আরও একদিন।

আগামীকাল মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিলখেলবে জার্মানির বিরুদ্ধে। আর পরদিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনারমুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। এমন লাইনআপে ফুটবল উত্তেজনায় কাঁপছে ব্রাজিল।আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল মনে করছে, এই দুই দেশ ফাইনালে খেলবে। বিশ্বকাপফুটবল শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্রাজিল বলে আসছে, আমরা খেলবো ফাইনাল।প্রতিপক্ষ হবে আর্জেন্টিনা। ইতিহাসের সেরা ফুটবল ফাইনাল।এসব কথা শুনেআর্জেন্টিনার সমর্থকরাও বলছেন, এমনটা হলে তো ভালোই। ইতিহাসের সেরা ম্যাচআমরা উপভোগ করবো। ব্রাজিল থেকে ট্রফি নিয়ে যাবো।

১৩ জুলাইমারাকানায় ফাইনালের মঞ্চে যাওয়ার আগে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাকে কঠিনলড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। পাওয়ার ফুটবলের মুখোমুখি হতে হবে। ব্রাজিলেরপ্রতিপক্ষের নাম জার্মানি। যে দলটি সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসতে অনেক কাঠখড়পুড়িয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ১-০ গোলে এবং পর্তুগালকে ৪-০ গোলেহারিয়েছে। শক্তিশালী দলকে বিদায় করেছে। ঘানার সাথে ২-২ গোলে ড্র করেছে।ব্রাজিল যেমন নেইমার নির্ভর। জার্মানি সেটা না। পুরো দলের উপর নির্ভর করেতাদের শক্তি। ফিলিপ লাম, থমাস মুলার, মেটত্সুল ওজিল, সোয়ানস্টাইগার ছাড়াওকোচ জোয়াকিম লোর সাথে আরো আছেন অভিজ্ঞ পোডলস্কির মতো ফুটবলার।অন্যদিকে ব্রাজিলের অধিনায়ক থিয়েগো সিলভা খেলতে পারবেন না হলুদকার্ডেরসাসপেনশনের কারণে। নেইমারকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কোচ লুইস ফিলিপস্কোলারি। ফ্রেড, দানিয়েল আলভেস, অসকার, হাল্ক, লুইস গাস্টোভা, মার্সেলোদের খেলার প্রেরণা নেইমার। ব্রাজিল স্ট্রাইকার নেইমার মাঠে ফিরেআসুক আর না আসুক জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততে ঘাম ঝরে যাবে তাদের।

তবেব্রাজিলের সামনে ঘরের মাঠে ট্রফি জয়ের সুযোগ আছে। ৬৪ বছর পর আবার নিজেদেরমাঠে খেলা হচ্ছে। ব্রাজিল কতটা পারবে সেটা নিয়ে কথার যুদ্ধ চলছেব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে। ইতিহাস বলছে, ৯০ এর ইতালি বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালেআর্জেন্টিনার ধ্রুপদি ফুটবলকে হারিয়েছিল জার্মানি। জার্মানি (৫৪, ৭৪, ৯০) ৩বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গত দুটি আসরের সেমিফাইনালে ছিল জার্মানি। বিশ্বকাপফুটবলের গত ১৯টি আসরে ব্রাজিল ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হলেও গত দুটি আসরেকোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গিয়েছিল। এবার সেটা অতিক্রম করায় ব্রাজিলেরসাধারণ মানুষও বেশ খুশি। ব্রাজিলের সরকার বিরোধীরাও এখন আন্দোলন থামিয়েরেখেছে নেইমারদের ফুটবল নৈপুণ্যের কারণে। নিয়মিত ব্রাজিল ফুটবল দলের খেলাদেখতে যাচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ। তিনিও বেশ উদ্বিগ্ননেইমারের চোটের কারণে। দিলমা রৌসেফ চিঠি লিখে নেইমারকে সহমর্মিতাজানিয়েছেন। দিলমা রৌসেফ তার চিঠিতে লিখেছেন, ‘নেইমার তোমার চোটের কারণেসব ব্রাজিলিয়ানদের মতো আমার হূদয়ও ভেঙ্গে গেছে। সৃষ্টিকর্তা তোমাকেসাহস দিক। তুমি আবার মাঠে ফিরে আসো।’ জার্মানির ওজিলও নেইমারের প্রতিসহমর্মিতা জানিয়েছেন। তবে মাঠের বাইরে সহমর্মিতা জানালেও মাঠের ভেতরেব্রাজিলকে আঘাত করার জন্য প্রস্তুত ওজিল।

এদিকে আর্জেন্টিনা যেভাবেখেলে আসছে সেভাবে খেললে সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের সাথে পেরে উঠা কঠিনহবে। আর্জেন্টিনাও ব্রাজিলের নেইমারের মতো মেসি নির্ভর। লিওনেল মেসিইহচ্ছেন কোচ সাবেলা, হিগুয়েন ডি মারিয়াদের শক্তি। কোয়ার্টার ফাইনালে কোচআলেসান্দ্রো সাবেলা তার পুরো দল পাননি। তিনটা পরিবর্তন করতে বাধ্যহয়েছিলেন। সেমিফাইনালেও পুরো দলকে পাবেন কিনা আশঙ্কা আছে। ডিফেন্সে গোগো, ফেডরিকো ফার্নান্দেজ, রোজোকে নামাননি। মার্টিন ড্যামিসেলিস, মারিয়াবাসান্তা, লুকাস বিগলিয়াকে মাঠে নামিয়েছেন। আগুয়েরার ইনজুরি আছে। ডি মারিয়াকোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ব্যথা পেয়েছেন। তাকেও সেমিতেপাওয়া যাবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। নেদারল্যান্ডসের মতো দলের বিরুদ্ধেপুরো শক্তি নিয়ে নামতে না পারলে আর্জেন্টিনার কপালে অমঙ্গল বয়ে আসতে পারে।৭৮ এবং ৮৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবার ২৪ বছর পর আবারসেমিফাইনালে উঠেছে। এবার তারা ফাইনাল থেকে দুই ম্যাচ দূরে। কোচ সাবেলাজানিয়েছেন, আমরা একটু চিন্তামুক্ত হয়েছি। এবার কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্যপ্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্সআপ নেদারল্যান্ডসকোস্টারিকার সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে শিক্ষা নিয়েছে। কোস্টারিকারবিরুদ্ধে শুরুতেই হেলাফেলা করে নেদারল্যান্ডস নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছিল।ভাগ্য ভালো টাইব্রেকারে জিতে হাত ছাড়া হতে যাওয়া সেমিফাইনালের টিকিটটাপেয়েছে টোটাল ফুটবলের জনক নেদারল্যান্ডস। রোবেন, ফন পার্সিদের গোল মিসহলেও কোস্টারিকা তো নেদারল্যান্ডসের জালে গোল প্রায় করেই ফেলেছিল!আর্জেন্টিনাকে ট্রফি পেতে হলে নেদারল্যান্ডসের সামনে কঠিন পরিক্ষা দিতেহবে। কারণ আর্জেন্টিনার মতো নেদারল্যান্ডস একজন ফুটবলার নির্ভর দল নয়।এদের আক্রমণভাগে আছে একাধিক ফুটবল যোদ্ধা। যারা শেষ বাঁশির আগ পর্যন্ত মরণলড়াই করার ক্ষমতা রাখেন। স্নেইডার, রোবেন, ফনপার্সিকে ২০০ মিনিট ফুটবলখেলতে দিলেও মনে হয় তারা একই রিদমে খেলতে পারবেন। কোস্টারিকার বিরুদ্ধেম্যাচে সেটাই মনে হয়েছে। ক্লান্তিহীন ফুটবল খেলতে পারেন এই ডাচ ফুটবলাররা।এমনটা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে খেলতে পারলে মেসিদের কপালেও দুর্ভোগ আসতেপারে। ১৯৩০ সালে শুরু হওয়ার বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে ১৯টি টুর্নামেন্টেরমধ্যে নেদারল্যান্ডস ৯টি টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছে। ৭৪ এবং ৭৮বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েছিল। আরেকটি ফাইনালে উঠতে নেদারল্যান্ডসকে অপেক্ষাকরতে হয়েছিল ৩২ বছর। আবার ডাচ ফুটবলের সামনে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল।জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডস। এবারধ্রুপদি ফুটবলের বিরুদ্ধে আধুনিক পাওয়ার ফুটবল কি করে, সেটাই দেখারঅপেক্ষা।