বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে বিদ্যুত পরিস্থিতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে মেহেরপুর ॥ চুয়াডাঙ্গায় বেহালদশা

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত না পেয়ে বারুদের মতো ফুঁসছে গ্রাহক সাধারণ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুতের বেহালদশা হলেও মেহেরপুরে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত। কেন? কারণ- বিশেষ বরাদ্দ। চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রে যতোটুকুই বিদ্যুত সরবরাহ করা হোক না কেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেহেরপুরে ২ মেগাওয়াট বরাদ্দ দেয়ার পর বাকিটা চহিদা অনুপাতে বণ্টন করতে হয়। এতেই মেহেরপুর প্রায় লোডশেডিংমুক্ত। আর চুয়াডাঙ্গার চিত্র তার উল্টো।
ভ্যাপসা গরমে চুয়াডাঙ্গায় যখন হাপিত্যেশ, তখন লোডশেডিং বেড়েছে যেন পাল্লা দিয়ে। এরপর শিক্ষার্থীদের সামনে পরীক্ষা। ফলে বিদ্যুত না পেয়ে শিক্ষার্থীদের যেমন পঠন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনই অভিভাকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও বিদ্যুতের নাজুক পরস্থিতি প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে আসে। শুধু চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা পৌর শহরেই নয়, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে পল্লি বিদ্যুত সমিতির গ্রাহকদেরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। দামুড়হুদা ও জীবননগর এলাকায় রাতে বিদ্যুত গেলে তো সকাল হওয়ার আগে বিদ্যুত পাওয়ার আশা ছেড়েই দিতে হয়। ফলে রাতে মশারির মধ্যে গিন্নির হাতের হাতপাখাই কর্তাসহ শিশুসন্তানদের স্বস্তির ভরসা। আর জেলা শহর, শহরতলিতে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র কারখানাগুলো চলার শক্তি তথা বিদ্যুত না পেয়ে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা আনিশ্চয়তার প্রহর গুনছেন। মেহেরপুরে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে লোডশেডিং কমাতে পারলে চুয়াডাঙ্গা কেন পারে না? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
চুয়াডাঙ্গায় ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির গ্রাহকদের বিদ্যুত সরবরাহের বিস্তারিত পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হলে, ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলী সুবক্তগীন বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা বিতরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার ওজোপাডিকো গ্রাহকদের মাঝে ৫টি ফিডারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। একই সাথে আলমডাঙ্গা উপজেলা শহর ও মেহেরপুর জেলা শহরের ওজোপাডিকো গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এসব গ্রাহকদের জন্য প্রয়োজন ২১ মেগাওয়াট। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিশেষ বরাদ্দের জন্য মেহেরপুরে ২ মেগাওয়াট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার পর থাকছে ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের চাহিদা অনুপাতে বণ্টন করতে গিয়ে মেহেরপুরকে দিতে হচ্ছে আরো তিন মেগাওয়াট। বাকি ৯ মেগাওয়াট দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৫টি ফিডারসহ আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরে রাত-দিন ঘুরে ফিরেই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। বিশেষ বরাদ্দের কারণে মেহেরপুরে লোডশেডিংই দিতে হচ্ছে না। গতকাল রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে গ্রিড সাবস্টেশনে জাম্পারে সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে ঘণ্টা দেড়েক চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের কোথাও বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরস্থ ৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনে যোগাযোগ করে জাতীয় গ্রিড থেকে বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যুত চুয়ডাঙ্গা ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির বিতরণ কেন্দ্রে কতোটুকু কীভাবে বরাদ্দ করা হয় তার সংক্ষিপ্ত চিত্র পাওয়া গেছে। সাবগ্রিডে কর্মরত নজরুল ইসলাম বলেছেন, ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার বিতরণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। এর বিপরীতে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়া হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুত সমতির চাহিদা ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হচ্ছে। জাতীয় গ্রিড থেকে এ পরিমাণের বেশি বিদ্যুত এখন পিকওয়ারে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে উৎপাদনে ঘাটতি নেই বলে দাবি করা হলেও জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার অর্ধেকেরও কম বরাদ্দ দিচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মিলছে না। মিলছে না প্রতিকারও।
গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ দশমিক ৮। দুুপুরের পূর্ব থেকেই আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। সন্ধ্যার আগে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত গতকাল চট্টগ্রামে ১০৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চেলেও গতকাল অল্প কিছু বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির প্রভাবে কিছুটা গরম কমলেও এর স্থায়ীত্ব কতোটুকু তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তবে আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে বলেছে, আজও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। রসিকজনের মন্তব্য, চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাপসা গরমে বিদ্যুতে স্বস্তি দিতে না পারলেও বৃষ্টিই এখন ভরসা।