বিরল বন্ধুত্বে দু কিশোর

স্টাফ রিপোর্টার: দু কিশোর। একজন বাদাম ভাজা ফেরিওয়ালা, অপরজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় করে ভিক্ষা। দুজনেরই কর্মস্থল মূলত রেলগাড়ি ও স্টেশন। একদিন দেখা না হলে দুজনের একজনও ভালো থাকে না। ওরকম বন্ধুত্ব বিরল বটে। মধ্যরাতেও ঘুমোতে না পেরে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে ছটফট করা প্রতিবন্ধী কিশোরের পাশে যখন এসে বসলো বাদামভাজা ফেরিওয়ালা কিশোর, তখন দুজনের মুখেই যেন স্বস্তির ছাপ।

ট্রেনের সময়সূচি ঘুলিয়ে গেছে। কখনকার ট্রেন কখন আসবে তার যেন কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। তাইতো অসংখ্য যাত্রীর ভিড়। রাত তখন আনুমানিক ২টা। সেদিন ছিলো সোমবার। ট্রেনের ঘণ্টা পড়লো ঢং ঢং করে। কিছুক্ষণ পরেই নিম্মমুখি তথা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে এসে থামলো। ট্রেন থেকে এক কিশোর নেমেই রনি রনি করে এদিক-ওদিক ছুটতে লাগলো। শেষে স্টেশনেই রনিকে পেলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কিশোর। রনির সাথে আলিঙ্গন করলো। এ প্রতিবেদক এগিয়ে গিয়ে তাদের কৌতূহলবশে জানতে চাইলেন, নাম ঠিকানাসহ দুজনের সম্পর্ক। বাদামভাজা বিক্রেতা কিশোর রাজীব তার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরের নামও বললো। ওর নাম রনি। আমরা দুজন বন্ধু। বয়স ১১/১২ হবে। আর রনি দরিদ্র ঘরের শারীরিক প্রতিবন্ধী, ফলে বেছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। বয়স প্রায় একই। রনির দুটি পা জন্ম থেকে পঙ্গু। সারাদিন রনি বিভিন্ন ট্রেনে ভিক্ষা করে। আর রাজীবও বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন ট্রেনে বাদাম বিক্রির জন্য। আর তাদের পরিচয় হয় ট্রেনের মধ্যেই। রাজীবের কষ্ট তার বন্ধুর দুটি পা থেকেও নেই। যে যেখানেই থাক তাদের দুজনের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে এসে দেখা হওয়াই লাগবে। আমার যদি সম্ভব হতো তাহলে আমার একটা পা কেটে বন্ধুকে দিয়ে দিতাম। রাজীব বললো, আমার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর কাঠালতলায়। বাবার নাম জালাল উদ্দীন। বাবা ঢাকাতে এক হোটেলে কাজ করে। ঠিকমতো খোঁজখবর নেয় না। তাই বাধ্য হয়েই বাদাম বিক্রি করতে আসা। আর রনির বাড়ি জীবননগর হাসপাতাল পাড়ায়। বাবা আমিনুল। থেকেও নেই। অন্যত্রে পেতেছে সংসার। বাধ্য হয়েই ভিক্ষাবৃত্তি পেশা নিয়েছে।