বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ সমস্যা প্রকট : ঘন ঘন বিকল হচ্ছে ট্রান্সমিটার

 

অটোচার্জের বাড়তি চাপে বেড়েছে ভোগান্তি : বিদ্যুত গ্রাহকদের মাঝে পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ

খাইরুজ্জামান সেতু: চুয়াডাঙ্গায় যখন সাব গ্রিড স্টেশন স্থাপন হলো তখন এলাকার বিদ্যুত গ্রাহকদের মধ্যে মানসম্পন্ন বিদ্যুত পাওয়ার আশা জাগলেও সেই আশার গুড়ে বালি। গ্রিড সাব স্টেশন স্থাপন করা হলেও ভোল্টেজ সমস্যা দূর হয়নি, বরঞ্চ বেড়েছে। কেন? জাতীয় গ্রিড থেকেই নাকি লো-ভোল্টেজের বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সমস্যা প্রকট রূপ নিয়েছে অটো রিকশার রিচার্জেবল ব্যাটারি চার্জের কারণে।

চুয়াডাঙ্গায় বেশ কয়েকটি স্থানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চার্জ দেয়া হচ্ছে। অটো প্রতি নেয়া হচ্ছে ১শ টাকা। কোথাও কোথাও আরো বেশি। যেসব এলাকায় অটো চার্জের দোকান বসানো হয়েছে, সেসব এলাকার অধিকাংশ ট্রান্সমিটারই লোড নিতে না পেরে বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে দানা বাধছে ক্ষোভ। ক্যাপাসিটি বিবেচনা না করে কেন অটো চার্জের দোকানে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে? নানামুখি জবাব। দেশে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও চুয়াডাঙ্গায় মাঝে মাঝেই বিদ্যুতের আসা যাওয়া কেন? সেই একই অজুহাত। বাড়তি চাপ। চাপের কারণে ট্রান্সমিটারের ফেজ কাটছে, ট্রান্সমিটারও বিকল হচ্ছে। মেরামত করে বিদ্যুত সংযোগ করার সময় পর্যন্ত গ্রাহকদের বিদ্যুত ছাড়াই থাকতে হচ্ছে। যে এলাকায় অটো চার্জের দোকান বেশি, সে এলাকায় এ সমস্যাও প্রকট। ভুক্তভোগী গ্রাহক সাধারণ এ অভিমত ব্যক্ত করে প্রতিকার প্রার্থনা করেছে।

চুয়াডাঙ্গায় রিচার্জেবল ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটো রিকশা প্রতিদিনই বাড়ছে। পৌরসভা থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়ার জন্য বলা হলেও তাতে তেমন সাড়া পড়েনি। অটোর বাড়তি চাপে শহরে যানজট তো আছেই, চালকের অদক্ষতার কারণে বেড়েছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দক্ষিণপ্রান্ত হয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের মাস্টার প্লান থাকলেও তা বাস্তবায়নের লক্ষণ নেই। অটো বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের তেমন জোরদার পদক্ষেপ না থাকায় সড়কে যানজট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। একই সাথে বেড়েছে বিদ্যুত সমস্যাও। একেতো লো-ভোল্টেজ, তার ওপর অটো চার্জের বাড়তি চাপে বিদ্যুতের রুগ্ন চেহারা ফুটে উঠছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও বিকল হচ্ছে। বিদ্যুতনির্ভর ক্ষুদ্র শিল্প কলকারখানাগুলোতে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ একাধিক ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা এ অভিযোগ করে বলেছেন, বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম কেন? কেনই বা এতো ঘন ঘন ট্রান্সমিটার বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে? এসব প্রশ্ন নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের বিতরণ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের সমস্যাটা মূলত জাতীয় গ্রিড থেকেই হয়ে আসছে। ৩৩ হাজার কেভি পাওয়ার কথা, আমরা পাচ্ছি ২৯ হাজার থেকে ৩০ হাজার কেভি। এরপর অটো চার্জের জন্য বাড়তি চাপের কারণে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া ট্রান্সমিটার যেখানেই বিকল হচ্ছে আমরা দ্রুত তা মেরামত করে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছি। ক্যাপাসিটি বিবেচনা না করে কোথাও সংযোগ দেয়া না হলেও অনেকেই আছে, বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার সময় তারা যে পরিমাণের বিদ্যুত ব্যবহারের কথা বলছে, দেখা যাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহার করছে। যেমন সাতগাড়ি এলাকায় এক গ্রাহকের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার জন্য তাকে জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধির তাগিদ দেয়া হয়েছে। কলেজ ফিডারে একজন বাণিজ্যিকভাবে সংযোগ নিতে চেয়েছে। তাকে ট্রান্সমিটারের ব্যবস্থা করার কথা জানানো হয়েছে। ক্যাপাসিটির বাইরে যেখানে অটো চার্জের দোকান রয়েছে সেগুলোর বিষয়েও নতুন করে ভাবা হচ্ছে।

বিদ্যুত চুরি হচ্ছে? এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, পূর্বের তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় সিসটেম লস হ্রাস পেয়েছে। কোথাও বিদ্যুত চুরির সুযোগ নেই। এরপরও কেউ চুরি করছে খবর পেলে সাথে সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।