বিদেশ যাওয়ার টাকা ফেরতের দাবিতে পারদুর্গাপুরের আদমব্যবসায়ীর মোটরসাইকেল আটকে রাখলেও পরে উদ্ধার

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার আশাবুল ভিটেমাটি, স্ত্রী-সন্তান সবই হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় এখন রাস্তায় রাস্তায় আহাজারি করে বেড়াচ্ছেন। পারদুর্গাপুরের চিহ্নিত আদমব্যবসায়ী খালেকের খপ্পরে পড়ে তিনি ভিটেমাটি বিক্রি করে ও বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে ৪ লক্ষাধিক টাকা দিলেও দীর্ঘ ৪ বছরেও তাকে বিদেশে পাঠানো হয়নি। শেষ সম্বল হিসেবে আশাবুল টাকা ফেরতের দাবিতে আদমব্যবসায়ী খালেকের মোটরসাইকেল আটকে রাখলেও পরে প্রভাব খাটিয়ে সে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রতারিত নিঃসম্বল আশাবুল রাস্তায় রাস্তায় চোখের জল ঝরাচ্ছে।

জানা গেছে, পারদুর্গাপুরের আরমান আলীর ছেলে আব্দুল খালেক আলোচিত আদমব্যবসায়ী। প্রায় ৪ বছর আগে তার খপ্পরে পড়ে পার্শ্ববর্তী নতিডাঙ্গার মৃত আহমেদ শেখের ছেলে আশাবুল হক। বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আদমব্যবসায়ী খালেক তার নিকট থেকে বিভিন্ন দফায় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, খালেক বিদেশ পাঠানো বাবদ প্রথমে ২ লাখ টাকা দাবি করে। অনেক কষ্টে আশাবুল নিজের জমানো টাকা ও আত্মীয়দের নিকট থেকে কর্জ করে চাহিদামাফিক ২ লাখ টাকা জোগাড় করে তা খালেকের হাতে তুলে দেয়। ২ লাখ টাকা হস্তগত করার পর দালাল খালেক তাকে বিদেশ পাঠানোর পরিবর্তে নানা সমস্যার কথা বলে দফায় দফায় বাড়তি টাকা দাবি করতে থাকে। দালাল খালেকের দাবি মেটাতে সে বেশ কয়েকজন আত্মীয় ও এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। তারপরও দালাল খালেকের ক্রমশ বর্ধিত চাহিদা কিছুতেই মেটাতে পারছিলো না সে। আবার দালাল তাকে টাকাও ফেরত দিচ্ছিলো না। বাধ্য হয়ে আশাবুল নিজের ভিটে-মাটি বিক্রি করে মোট ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা দালাল খালেকের হাতে তুলে দেয়। এরপর শুরু হয় দালালের মিথ্যার বেসাতী। বিভিন্ন সময়ে সে গত আড়াই বছর ধরে এক ডজন ফ্লাইট ডেট দিলেও সবই ছিলো প্রতারণা। গত ৪ বছরেও আশাবুল বিদেশ যেতে পারেনি। এদিকে ভিটেমাটি সব হারিয়ে আশাবুলের সংসার পরিণত হয় অভাবের আশ্রমে। সে এখন অন্যের জমিতে কামলা খাটে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে সবচে গাঢ় সম্পর্কও ফিকে হতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী-সন্তানও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। দালালের প্রতারণায় সব হারিয়েছে সে। ভিটেমাটি ও স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে নিঃসম্বল আশাবুল বড়ই দুর্দশায় দিনাতিপাত করছে। ফোন করলেই দালাল খালেক বাড়িতে থাকলেও জানায় ঢাকায় আছে। এমতাবস্থায় সম্প্রতি সে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়ার সাথে আলোচনা করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এসআই জিয়া কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে আশাবুল আক্ষেপ প্রকাশ করেছে। আকস্মিকভাবে গত পরশু রোববার দালাল খালেকের দেখা পায় আশাবুল। সে টাকা ফেরতের দাবিতে দালাল খালেকের মোটরসাইকেল আটকে রাখে। দালাল খালেক পরে প্রভাব খাটিয়ে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে নিলে নিঃস্ব অসহায় আশাবুলের চোখ ফেটে জল আসে। এ ঘটনার পর সে রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে ফিরছে।