বিজিবি ও বিএসএফ’র হাতে ২ বাংলাদেশি আটক

দর্শনা জয়নগর ও নিমতলা সমান্ত পথে ধুড় পাচারের অভিযোগ

এরশাদপুরে বাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পৌর যুবলীগ সভাপতিসহ আটক ২ : মুক্তির দাবিতে গ্রামবাসর মিছিল

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার এরশাদপুরে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গতকাল রাতে পুলিশ আলমডাঙ্গা পৌর যুবলীগ সভাপতিসহ ২ যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে। পতিতাবৃত্তির অভিযোগে এরশাদপুরের বিক্ষুব্ধ মানুষ গতকাল সকালে ওই বসতবাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, এজাহারনামীয় কতিপয় যুবক পূর্বশত্রুতার রেশ ধরে গত রোববার গভীর রাতে এরশাদপুর গ্রামের আলী আহমেদের বাড়িতে জোর করে ঢুকে আলী আহমেদ (৫৫), তার স্ত্রী দীপু খাতুন (৪৫), ছেলে স্বপন(১৩), মেয়ে ডলি (১৯) ও ভায়রার মেয়ে বাসনাকে (১৪) বেধড়ক মারপিট করেছে। বাড়িতে লুটপাট করেছে। শেষে বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে গতকাল আলি আহমেদ বাদী হয়ে পৌর যুবলীগ সভাপতি আব্দুল গাফফার, তার সহোদর, যুবলীগ নেতা মনাসহ ৮ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেছে। এ এজাহারের সুত্র ধরে গতকাল রাতে থানা পুলিশ আলমডাঙ্গা হাইরোড থেকে পৌর যুবলীগ সভাপতি আব্দুল গাফফার ও যুবলীগ নেতা মনাকে আটক করেছে।

গ্রাম সূত্রে জানা গেছে, এরশাদপুর গ্রামের চাষিপাড়ার দরিদ্র আলি আহমেদের স্ত্রী-কন্যাদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ বেশ উচ্চকিত। এ নিয়ে চাষিপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। গত রোববার রাতে গ্রামের এক দল যুবক গোপন সংবাদ মারফত জানতে পারে আলী আহমেদের মেয়ে ও শ্যালোকের এক মেয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা। সে সময় ওই যুবকদের সাথে লোড শেডিং চলাকালে গরমে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া গ্রামের আরও কিছু লোকজন যোগ দেয়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে চড়াও হয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী গ্রামের ৩/৪ জন যুবক ও আলী আহমেদের এক মেয়েকে আটক করে বলে জানায়। অন্যরা পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীর অনেকেই দাবি করেন ধরা পড়া যুবকরা সে সময় অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। সকালে আলী আহমেদের শ্যালকের মেয়ে বাসনাকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। এরপর সালিস বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিস চলাকালে গ্রামের বিক্ষুব্ধ একটি গ্রুপ আলি আহমেদের ফাঁকা বাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরশাদপুর গ্রামের চাষিপাড়ায় বসবাসকারী প্রায় সকলেই ক্ষুব্ধ আলী আহমেদের পরিবারের উপর। পরিবারটির অসামাজিক জীবন-যাপনের কারণে গ্রামবাসী এতটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর একটা অংশ আলী আহমেদের বাড়ি পুড়িয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছে। তারা দাবি করেছেন, পৌর যুবলীগ সভাপতি আব্দুল গাফফার ও মনা সকালে সালিসে উপস্থিত থেকে বিচার করছিল। তাদেরকে বাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত করা গ্রুপিং রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। গ্রুপিং রাজনীতির কারনেই তাদেরকে গ্রেফতার হতে হয়েছে বলে অনেকের দাবি। যুবলীগ নেতা আব্দুল গাফফার ও রাজাবুল হক মনাকে ছেড়ে দেয়ার দাবিতে গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে এরশাদপুর গ্রামবাসী মিছিল করে থানা চত্বরে জড়ো হয়।

 

দর্শনা অফিস: ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ ও ভারত ছিলো একীভূত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তান হিসেবেই তখন ছিলো বাংলাদেশের পরিচয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীকে হটিয়ে জন্ম হয় সর্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশের। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর অনেকেই চলে আসে এ দেশে। পাশাপাশি ভারতে থেকে যায় স্বজনেরা। সে কারণেই ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারীর সংখ্যা বেড়েছে। পাসপোর্ট-ভিসার মাধ্যমে যাতায়াত করা হয়ে থাকে। বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় ভারতে যাতায়াতকারীদের ধুড় বলা হয়ে থাকে। দর্শনা জয়নগর সীমান্তে রয়েছে ধুড় পাচারকারীচক্র। দীর্ঘদিন ধরে এ চক্র ধুড় পাচার করে কামাচ্ছে প্রচুর অর্থ। দেশের অল্প আয়ের মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই ধুড় পাচারকারীচক্রের খপ্পরে পড়ে ভারতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। করতে হচ্ছে কারাভোগ। বিএসএফের গুলিতে জীবন দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়। তবুও বন্ধ হয়নি ধুড় পাচার। ধুড় পাচারচক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ও রাতে দর্শনা জয়নগর ও নিমতলা সীমান্ত পথে ভারতে ধুড় পাচার করছে এ চক্রের সদস্যরা। পরপর দু দিনে বিজিবি ও বিএসএফর হাতে ধরা পড়তে হয়েছে বাংলাদেশি দু নাগরিককে। গত রোববার ভারতের গেদে এলাকা অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে গেদে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার মহিষা দোড়া গ্রামের সন্যাসি সরকারের ছেলে সঞ্চয় কুমার সরকার (২৯)। রোববারই বিকাল ৫টার দিকে দর্শনাজগর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফর কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সঞ্চয়কে ফেরত দেয় বিএসএফ। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার রবিউল ইসলাম ও ভারতের গেদে বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার এসি সঞ্জিত কুমার। গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্তের পিলারের ২নং সাব পিলারের কাছ থেকে দর্শনা নিমতলা বিজিবির হাতে আটক হয় রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের গয়েশ ঘোষের ছেলে সৌরভ ঘোষ (২২)। অভিযোগ উঠেছে, সৌরভ ও সঞ্জয়কে আলাদা আলাদাভাবে ভারতে পাচার করেছিলো ধুড় পাচারকারীচক্রের অভিযুক্ত হোতা আব্দুল কুদ্দুস, হেলাল, এনাজুল। জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা হারে নেয়া হয় পাচারের জন্য। আরো অভিযোগ উঠেছে, জয়নগরের মহিদুল, আনোয়ার, ইদ্রিস, মজিদ, বেল্টু, কুদ্দুস, এনাজুলসহ ১৫/১৬ জন ধুড়পাচারচক্রের সাথে জড়িত। এ চক্রের সদস্যরা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের নাম ভাঙিয়ে থাকে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডারগার্ডের পরিচালক লে. কর্নেল মনিরুজ্জামান ও পুলিশ সুপার রশিদুল হাসানের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।