বিজিবির কাছে দুঃখপ্রকাশ : ৭ বিএসএফ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর নতুনপাড়া সীমান্তে বাংলাদেশি স্কুলছাত্রকে গুলি করে খুন

 

জীবননগর ব্যুরো/স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নতুনপাড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর শিহাব উদ্দিন সজল নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএসএফ’র সাত সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রেববার রাত সোয়া ১০টায় চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল আমির মজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, পতাকা বৈঠকে বিজিবির কাছে ওই ঘটনার জন্য বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, ৭ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে দোষী হলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন বিএসএফ কমর্কর্তা।

জানা গেছে, বিজিবির উদ্যোগে রোববার সকালে বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার উপমহাপরিচালক মাহাবুবুর রহমান ও বিএসএফ’র পক্ষে কৃষ্ণনগর সেক্টর কমান্ডার ডিআইজি কৈলাশ লাল সাহা নেতৃত্ব দেন।

পতাকা বৈঠকে বিজিবির কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার উপমহাপরিচালক কর্নেল মো. মাহাবুবুর রহমান-পিএসসি বিজিবির পক্ষে ও ভারতের কৃষ্ণনগর বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার ডিআইজ কিলাস লাল সাহা বিএসএফ’র পক্ষে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এ সময় তাদেরকে সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আমির মজিদ, বিএসএফ’র নোডাল অফিসার ডিআইজ জিআরপিএস জাসোয়াল ও ১১৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট মাহেন্দ্র কুমার।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি কিশোরকে গুলি করে হত্যার বিষয়ে  বিএসএফ উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিজিবিকে আশ্বস্ত করে। এরই অংশ হিসেবে বিএসএফ ১১৩ ব্যাটালিয়ন বানপুর কোম্পানি কমান্ডার এসি অনুভব আত্রাইসহ ৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওই ৭ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিজিবিকে জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র কৃষ্ণনগর সেক্টর।

উল্লেখ্য, তারকাঁটার এ পাশে বাংলাদেশি অংশে অবস্থিত ভারতীয় বাগান মালিকের আম কেনার পর আম পাড়তে গেলে শিহাব উদ্দিন সজলকে বিএসএফ হত্যা করেছে দাবি করে এর বিচার দাবি করে বিজিবি। ঘটনাটি ঘটে গতপরশু। নতুনপাড়া সীমান্তের ৬৬ মেন পিলারের নিকট আমবাগানে গতকাল রোববার সকাল ৭টার সময় বিজিবি-বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলে এ পতাকা বৈঠক। পতাকা বৈঠকে গত শনিবার শিহাবকে বিএসএফ কর্তৃক হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এ সময় বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকে উপস্থিত নিহত শিহাবের পিতাসহ নির্যাতিত অপর ৩ তরুণের জবানবন্দি নেয়া হয়। নিহত শিহাবের পিতা মাহবুব হালসানা এ সময় বিএসএফ কর্তৃক তার ছেলে হত্যার প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তে অবস্থিত ভারতীয় বাগান মালিকদের আমবাগান কিনে এখন বেকায়দায় পড়েছেন বাংলাদেশি আমব্যবসায়ীরা। তারা চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এবং আম বাগানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সীমান্তের ভারতীয় আমবাগান বাংলাদেশি আমব্যবসায়ীরা কেনার পর গত ১৪ মে শনিবার বেলা ১১টার দিকে স্কুলছাত্র শিহাবসহ ৪ তরুণ ওই আমবাগানে আম পাড়তে গেলে ভারতের বানপুর ধনিঞ্চার ক্যাম্প বিএসএফ তাদেরকে আটক করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় শিহাব বিএসএফ’র কবল থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে ধাওয়া করে ধরার পর তার সঙ্গীদের সামনে পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।