বিচার বহির্ভূত হত্যা : ফের হাইকোর্টে উঠছে র‌্যাবইস্যু

 

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জেরচাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব সদস্যদের গ্রেফতার ওহত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশের পর বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগনিয়ে ফের হাইকোর্টে উঠছে ‘র‌্যাব’ ইস্যু।এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী শাহনূর আলমকে হত্যার অভিযোগে র‌্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আরজি উঠছে দেশের সর্বোচ্চ এ আদালতে।র‌্যাব-১৪এর ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়কসহ ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগতপদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ স্থগিত করে বিচারিক আদালতের দেয়া একটি আদেশেরবৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে এ আরজি জানাচ্ছেন নিহত শাহনূরের স্বজনরা।একইসাথে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ ও দোষী সদস্যদের গ্রেফতারে আমলি আদালতের দেয়া আদেশ বহাল রাখার আরজিও জানানো হবে।হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী শাহনূরের পরিবার ও তাদের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

রোববারঅথবা সোমবারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় র‌্যাব কর্মকর্তাদেরবিরুদ্ধে ওই আবেদন দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জনিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সিনিয়র আইনজীবী র‌্যাবেরবিরুদ্ধে এ মামলায় আইনি লড়াইয়ে অংশ নিতে সম্মত হয়েছেন।অপরদিকে, এঘটনায় র‌্যাবের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের যে কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত নির্দেশঠেকাতে জোড়ালো আইনি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারের এ বিশেষ বাহিনী।যার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই সরকারের এটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সাথে র‌্যাবসদর দপ্তরের লিগাল উইং থেকে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হয়েছে। এটর্নি জেনারেলকার্যালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন|

মামলারআরজি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বগডহর গ্রাম থেকে ব্যবসায়ী শাহনূর আলমকেচোখ ও মুখ বেঁধে র‌্যাবের ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায় র‌্যাব-১৪-এর একটি দল।সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহনূরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন ক্যাম্পের অধিনায়ক সাকিব সিদ্দিক।একপর্যায়ে শাহনূর অচেতন হয়ে পড়েন। পরদিন সকালে চেতনা ফিরলে তাঁকে নবীনগর থানায় নেয়া হয়।এরপরউপজেলা সদরের স্থানীয় আবু তাহেরকে  ডেকে এনে শাহনূরের বিরুদ্ধে মামলা করায়র‌্যাব। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ৪ মে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালেএবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৬ মেশাহনূরের মৃত্যু হয়।এর পরদিন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানারউপপরিদর্শক (এসআই)  মো. সাইফুল ইসলাম কুমিল্লার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটআরিফুল ইসলাম সরদার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার হুমায়ুনকবীর, কারারক্ষী জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচ সাক্ষীর উপস্থিতিতে লাশের সুরতহালপ্রতিবেদন  তৈরি করেন।

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত শাহনূরআলমের ডান হাতের কনুইয়ের ওপরে  থেঁতলানো ও রক্তাক্ত দাগ আছে। বাঁ হাতেরকনুইয়ের ওপরে ও নিচে  থেঁতলানো কালচে বর্ণের দাগ, ডান ও বাঁ ঊরুর ওপরেরঅংশে  থেঁতলানো গুরুতর জখমের এবং ডান ও বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে বিভিন্ন অংশেকালচে বর্ণের দাগ আছে। কোমরের নিচে দু পাশে এবং দু পায়ের পাতা পর্যন্তরক্তাক্ত থেঁতলানো ও যৌনাঙ্গে জখমের দাগ রয়েছে।একই দিন লাশের ময়নাতদন্ত হয়।

ময়নাতদন্তপ্রতিবেদনে বলা হয়, পেটে, বুকে, শরীরের নিচের অংশে ও অ-কোষসহ শরীরেঅনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। যা ছিলোমৃত্যুর আগের আঘাত। হত্যার উদ্দেশে আঘাতের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।এছাড়াশাহনূরের পিতা রইছ মিয়া বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহনূর জানায় র‌্যাবেরসদস্যরা ক্যাম্পে তার মুখে গরম পানি ঢেলেছে। তার তলপেটে অনেক লাথি মারাহয়েছে। কারেন্টের শক্ দেয়া হয়েছে। পশুর মতো আচরণ করেছে।এরপরশাহনূরকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে এনে ১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করেন শাহনূরের ছোট ভাই মেহেদীহাসান।মামলায় র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়ক  মেজর এজেডএমসাকিব সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া র‌্যাব-১৪-এর উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক, নবীনগরের কৃষ্ণনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও উপজেলা সদরেরআবু তাহেরের নাম উল্লেখসহ র‌্যাবের অজ্ঞাতনামা আরও সাতজনকে আসামি করা হয়।আবেদনেরঅধিকতর শুনানি শেষে ৪ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার  জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নাজমুননাহার মামলাটি গ্রহণ করে এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপবা গ্রেফতার করতে নবীনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

এর পরদিনইনাজমুন নাহারকে আমলি আদালত  থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ৮ জুনব্রাহ্মণবাড়িয়ার  জেলা দায়রা ও জজ আদালতের হাকিম  মোহাম্মদ কাউছারএ-সংক্রান্ত পূর্ববর্তী আদেশ সংশোধন করে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা  নেয়ারনির্দেশ  দেন।তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় কোনো মামলা হয়নিবলে নিশ্চিত করেছেন নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপক কুমার সাহা।নারায়ণগঞ্জের সাত খুনে র‌্যাবের তিনকর্মকর্তা গ্রেফতার হওয়ার পর কুমিল্লার লাকসামে বিএনপির দু নেতাকে অপহরণকরে হত্যার অভিযোগেও র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা হয়।