বিক্ষুব্ধ ব্রাজিলে ক্ষোভের আগুন : সহিংসতা

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের ব্যবধানে হারার পর ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে।হতাশ সমর্থকদের বিধ্বংসী কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখতে রেসিফি শহরেফুটবলপ্রেমীদের বড় পর্দায় খেলা দেখার জায়গা ফিফা ফ্যান ফেস্ট-এ অশ্বারোহীপুলিশ মোতায়েন করা হয়।এসময় অশ্বারোহী পুলিশ বাহিনীর এক সদস্য আহতওহন বলে ব্রিটিশ পত্রিকা এক্সপ্রেস জানিয়েছে। আহত ওই পুলিশ সদস্যের ঘোড়া, গোলোযোগ চলার সময় আতঙ্কিত হয়ে তাকে নিজের পিঠ থেকে ফেলে দিয়েছিলো।১৯২০সালের পর এই প্রথম ব্রাজিল কোনো দলের সাথে এতো গোলের ব্যবধানে হারলো। এরআগে বিশ্বকাপেও কখনো এতো গোলে হারেনি ব্রাজিল। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে পোল্যান্ডেরবিপক্ষে ৫ গোল খেলেও ম্যাচটি তারা জিতেছিলো ৬-৫ ব্যবধানে।খেলার সময়েই বেলো হরিজেন্তে শহরের সাভাসি নাইট ক্লাব এলাকায় ব্রাজিলিয়ানদের সাথে জার্মান সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।রাজধানীর রিও দি জেনেইরোর পুলিশ জানিয়েছে, কোপাকাবানা সৈকতে ফিফা ফ্যান ফেস্টেও খেলার পরপরই মারামারি শুরু করে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা।কোপাকাবানা প্যালেস এলাকায় একদল তরুণ একই সময়ে পর্যটকদের ছিনতাই ও ডাকাতি করে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এসব ঘটনায় ব্রাজিলিয়ান পুলিশ আটজনকে আটক করেছে।তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছ,খেলার সময় সৈকত এলাকায় সমর্থকদের মধ্যে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনকছিলো।সাওপাওলো শহরে ১২টি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে ব্রাজিলের হতাশ সমর্থকরা। এছাড়াশহরের ধনী এলাকা হিসেবে পরিচিত সাউথ জোনে একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানেওভাঙচুর ও লুট করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।ব্রাজিল-জার্মানির এইম্যাচটির আলোচনায় টুইটার কমেন্টে রেকর্ড হয়েছে। এই ম্যাচ নিয়ে টুইটারে ৩কোটি ৫৬ লাখ টুইট হয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিহাসে এর আগে আরকোনো খেলা নিয়েই এতো মন্তব্য হয়নি।হারের সব দায় নিয়ে ব্রাজিলের কোচলুইস ফেলিপে স্কলারি বলেছেন, ব্রাজিলের জনগণের প্রতি আমার বার্তা,এইখেলার জন্য আমাদের মাফ করবেন। আমি দুঃখিত যে আমরা ফাইনালে পৌঁছাতে পারিনি।আমরা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি জেতার চেষ্টা করবো।
ব্রাজিলেরস্থানীয় পত্রিকাগুলো ব্রাজিলের এই ফলাফলকে বিপর্যয়করএবং ঐতিহাসিকঅপমানবলে উল্লেখ করেছে। সেইসঙ্গে তারা এমন সব ছবি ছেপেছে যেখানেবিশ্বব্যাপি ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের বিপর্যয় ফুটে উঠেছে।৬৭ বছর বয়সীঅবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভ্যালেরিয়া ম্যাজিউর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়েবলেছেন, আমি হতাশাগ্রস্ত, দুঃখিত। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা আমার খুব লজ্জালাগছে।সাও পাওলোর পার্শ্ববর্তী ভবঘুরেদের এলাকা হিসেবে পরিচিত ভিলা ম্যাদালেনায়হাজার হাজার ব্রাজিল সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন বড় পর্দায় খেলা দেখতে।হেরে যাওয়ার পর তাদেরই একজন সামির কেলভিন বলেন, আমি একজন ব্রাজিলিয়ান এবং আমি লজ্জিত। আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করছে।তার পাশেই আরেক নারী চেঁচাচ্ছিলেন, কী লজ্জা! কী লজ্জা!টুর্নামেন্টশুরুর আগেও বিশ্বকাপে কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয়ের সমালোচনা করে এর বদলেসামাজিক কাজে সরকারকে ব্যয় বাড়াতে ব্রাজিলে বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্বকাপ চলারসময় সেই বিক্ষোভ আস্তে আস্তে থিতিয়ে আসে।তবে স্বাগতিক দেশের এমনফলাফলে সেই বিক্ষোভ আরো মাথা চাড়া দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আগামীঅক্টোবরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।তারা মনে করছেন, বর্তমানপ্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের জনপ্রিয়তায় এ পরাজয় প্রভাব ফেলতে পারে। অবশ্যখেলা শেষ হওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট এক টুইটার বার্তায় দেশবাসীকে সান্ত্বনাদেয়ার চেষ্টা করেছেন।রৌসেফ লিখেছেন, অন্য ব্রাজিলিয়ানদের মতো আমিওএই পরাজয়ে খুব খুব দুঃখ পেয়েছি। আমার সবার জন্য খারাপ লাগছে- বিশেষ করেখেলোয়াড় ও সমর্থকদের জন্য। কিন্তু ভেঙে পড়বেন না। ব্রাজিল, গ্লানি ঝেড়েফেলে নতুন করে শুরু করো।