বিএনপি নেতা কৃষক শওকত খুন : সন্দেহভাজনের সপরিবারে আত্মগোপন

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলজগন্নাথপুর মাঠে দিবালকে নৃশংসতা! কোদালের কোপ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলার রেলজগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক স্থানীয় বিএনপি নেতা শওকত আলী ফরায়েজী ওরফে শকোকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় তাকে নিজ ভুট্টাক্ষেতের আলের ওপর হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ  তেমন কোনো তথ্য দিতে না পারলেও নিহতের চাচাতো ভাই মুনতাজ ও মুনতাজের বন্ধু নাজমুল কোদাল দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পারিবারিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে, অভিযোগ উঠতে না উঠতেই অভিযুক্ত নাজমুল ঘরবাড়ি তালাবদ্ধ করে পালিয়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার রেলজগন্নাথপুর গ্রামের মৃত নেওয়াজ ফরায়েজীর বড় ছেলে শওকত ফরায়েজী (৫৫) কালিদাসপুর ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। পারিবারিকসূত্র জানিয়েছে, শওকত আলী গরুর ঘাস সংগ্রহ করতে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ডাঙার মাঠে ভুট্টাক্ষেতের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। বেলা ১১টার দিকে তিনি ভুট্টা ভাঙার জন্য বেগারহেলা নিতে লোক ঠিক করতে গ্রামের ভেতর যান।  বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ ভূট্টাক্ষেতে তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে গ্রামের এক কৃষক নিহতের পরিবারকে জানায়। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায়। বিকেলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের কারণ: নিহত শওকত আলীর সাথে মৃত ওয়াজ ফরায়েজীর ছেলে মুনতাজ আলীর জমিজমা নিয়ে বিবাদ ছিল। শওকত ফরায়েজীর আপন চাচাতো ভাই মুনতাজ আলী। কয়েক বছর আগে মুনতাজ আলী এজমালি জমিতে নতুন করে বাড়িঘর করেন। পরিবর্তে ওই পরিমাণ জমি নিহত শওকত ফরায়েজীকে  অন্যত্র  দিয়েছিলেন। পরে কয়েক বছর পরে মুনতাজ আলী সেই জমি থেকে বাড়িঘর সরিয়ে গ্রামের শেষ মাথায় চলে যান। গত ২ বছর আগে তিনি গ্রামের শেষ মাথায় তার এক বন্ধুর বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। সেই সুবাদে আগে যে জমি শওকত ফরায়েজীর সাথে বিনিময় করেছিলেন, সেই জমি মুনতাজ ফেরত চান। শওকত ফরায়েজী ঘর ভেঙে চলে গেলেও মুনতাজ তার সেই ভিটের জমি সমান করে দেননি। সমান করে দিলেই শওকত ফরায়েজীও তার জমি ছেড়ে দেবেন। এই নিয়ে তাদের দুজনের ভেতর দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। সম্প্রতি তাদের মধ্যে মারামারিকে কেন্দ্র করে একটা মামলাও চলছিল। গতকাল ঘটনার দিন সকালে মুনতাজ ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী জমিতে পানির নালা তৈরি করছিলেন। সকলের  ধারণা মুনতাজই তাকে কোদালের উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছেন। এমন কি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা কোদালটিও মুনতাজ আলীর বলে দাবি করেছে নিহত শওকত ফরায়েজীর পরিবার। পরিবারের দাবি মুনতাজ তার বন্ধু নাজমুলের সহযোগিতায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নাজমুল একই গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ছেলে। সরেজমিনে ঘুরে গ্রামে কোথাও অভিযুক্ত মুনতাজের দেখা মেলেনি। তার বাড়ি ঘরে তালা লাগানো। এমনকি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পর্যন্ত নেই।

গ্রামের একাধিকসূত্রের ধারণা মুনতাজের পক্ষে এ ঘটনা ঘটানো স্বাভাবিক। কারণ মুনতাজ গোয়ার স্বভাবের। অনেকটাই অসামাজিক। নিহতের এক ভাই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক। তিনি সম্প্রতি বাড়ি গিয়ে মুনতাজকে অনুরোধ করে বলেছিলেন – নিজেদের ভেতর বিবাদ করলে সকলের ক্ষতি। সকলের মর্যাদারও হানি হবে। একটু ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করে নিলেই হবে। তিনিও বিষয়টি মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে কথা দেন। কিন্তু মুনতাজ তার প্রস্তাবে কোন উত্তর দেয়নি। চুপ করে ছিলেন। তিনি কোনো যুক্তি মানতে রাজি ছিলেন না।

আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে – মুনতাজই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঘটনাস্থলের একেবারে নিকটই মুনতাজ অবস্থান করছিলেন। সেখানে নরম মাটিতে তার পায়ের যে ছাপ রয়েছে, সেই পদচ্ছাপের সাথে  শওকত ফরায়েজীর লাশের নিকটের দৌঁড়ে পালানো অজ্ঞাত ব্যক্তির পদচ্ছাপেরও মিল পাওয়া গেছে।

নিহত শওকত ফরায়েজী ওরফে শকো ছিলেন ৩ ভাইয়ের মধ্যে সকলের বড়। তিনি ছিলেন এক ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেটি প্রবাসী। বড় মেয়ে বিবাহিত।

আজ সকালে নিহত শওকত ফরায়েজীর লাশের ময়না তদন্তের পর বাদ জোহর গ্রামের গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে পারিবারিকসূত্র জানায়। গতকাল এ সংবাদ লেখা অবধি এজাহার দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।