বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের ভোটবর্জন : চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গায় আধাবেলা হরতাল আজ

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, কেন্দ্র দখলসহ অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল আহ্বান করেছে বিএনপি। এ হরতালকে সমর্থন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মজিবুল হক মালিক মজু গতকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনে ৮৫টি ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেকটি কেন্দ্রই সকাল ৮টার আগে গভীররাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সরকার দলীয় প্রার্থী আনারস প্রতীককে অন্যায়ভাবে এবং নীল নকশার মাধ্যমে জয়যুক্ত করার জন্য ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখে। সকাল হওয়ার সাথে সাথে আমার পক্ষের এজেন্টগণ তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে সরকার দলীয় লোকজন ও ক্যাডাররা হুমকির মুখে বাধা দেয়। ফলে সকালেই এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। তাছাড়া নির্বাচনের পূর্বরাত ১২টার দিকে জেলা রির্টার্নিং অফিসার আনজুমান আরাকে ভোটগ্রহণের পূর্ব থেকে পুলিশের সহায়তায় ব্যালট বাক্স ভর্তি করার বিষয়ে জানিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করেও কোনো লাভ হয়নি। অপরদিকে বিকেলে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল সাংবাদিকদের ভোট বর্জনের কথা জানিয়ে নির্বাচনে চরম অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেন। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুর রশীদ ঝন্টু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতির নজির গড়েছে। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার তারা কেড়ে নিয়ে নিজেরাই সিল মেরে বাক্স ভর্তি করেছে।

            আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের ভোট বর্জন ও নানা ঘটন-অঘটনের মধ্যদিয়ে গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী কলম নামের এক সমর্থককে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। সরেজমিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘোরার সময় সাধারণ ভোটার, বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকেরা এন্তার অভিযোগ করেন। সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থক কর্তৃক বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, অন্যায়ভাবে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে নেয়া, বিরোধীদলের প্রার্থীর ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেয়া, তাদেরকে পুলিশ-র‌্যাব- সেনাবাহিনী দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ নানাবিধ অভিযোগ তুলে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।

ভোট চলাকালীন বেলা ১১টার দিকে ভোট বর্জন করেন বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা। বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল কাউনাইন টিলু, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক ডাবু ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পারুলা খাতুন রাবেয়া যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এ ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী টিলু সাংবাদিক সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে ভোট বর্জনের কারণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন- তার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে প্রতিপক্ষ সরকার দলীয় আনারস প্রতীকের প্রার্থী হেলাল উদ্দীন ও তার লোকজন ১০৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫২টি ভোট কেন্দ্রের সব ক’টিতে সকাল ৮ টার আগেই গভীররাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশের সহযোগিতায় আনারস প্রতীকে অন্যায়ভাবে জয়ী করার জন্য ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালটবাক্স ভর্তি করে রাখে। সকাল হওয়ার পর ভোটগ্রহণের আগেই টিলুর পক্ষের এজেন্টগণ তাদের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশে স্ব স্ব কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে সরকার দলীয় লোকজন ও ক্যাডারবাহিনী তাদের হুমকির মুখে ঢুকতে বাধা দেয় এবং কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশের সহায়তায় সরকার দলীয় লোকজন মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোর করে বের করে দিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এবং সরকার দলীয় লোকজন ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়। টিলুর এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালটে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। পরে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সাধারণ ভোটাররা জানতে পারেন তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নীলনক্সার মাধ্যমে তাদের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য প্রহসনমূলক ও লোক দেখানো নির্বাচন করেছে। ফলে তিনি এ প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে দাবি করেছেন। সেইসাথে ওই নির্বাচন বাতিল করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করাসহ এ অযোগ্য সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশন বাতিল করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন- ভোটের পূর্বরাত ১২টার পর সহকারী রিটার্নিং অফিসার আশরাফুল আলমকে ভোটগ্রহণের পূর্ব থেকে পুলিশের সহায়তায় ব্যালটবাক্স ভর্তি করার বিষয়ে প্রার্থী হিসেবে নিজে অবহিত করলেও তিনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

অন্যদিকে, একই দাবিতে জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর মোহাম্মদ হুসাইন টিপু ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. আহমেদ জালাল পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর মোহাম্মদ হুসাইন টিপু  তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, তিনি ও তার নির্বাচনী কর্মীরা বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারই আলোকে বিপুল জনসমর্থন নিয়েই নিবার্চনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সেই নিবার্চনে সশস্ত্র বাহিনীর গর্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার এবং র‌্যাব পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডাররা অভিনব কায়দায় ভোট ডাকাতির উৎসব চালিয়েছে। তারা নিয়োগকৃত প্রিসাইডিং অফিসার পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ সর্মথিত প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করে। ভোটগ্রহণের আগের রাতেই ৩০টি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি সম্পন্ন করে। এছাড়াও বাকি আরও ৪৯টি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রশাসনের সহযেগিতায় জামায়াত প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর-গালিগালাজ করে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে বাকি কেন্দ্রগুলোতে ভোট ডাকাতি করে। এ নিবার্চনকে ঘৃণিত ও অগণতান্ত্রিক নিবার্চন উল্লেখ করে জনগণ তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে তারা এ নিবার্চন বর্জন করেন ও পুনর্নির্বাচন দাবি করেন।

এদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সানোয়ার হোসেন লাড্ডু ভোট বর্জন ও পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের  মাধ্যমে আনুষ্ঠনিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। একই সাথে ১৯ দল আহূত আজকের হরতালের প্রতি সমর্থন জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শনিবার রাত ১০টা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচনে নিযুক্ত কর্মকতা কর্মচারীগণের সহযোগিতায় সরকার দলীয় লোকজন ১০৩টি ভোট কেন্দ্র দখল করে নিয়ে জালভোট প্রদান করে। নীলনকশার মাধ্যমে সরকার সমর্থিত প্রাথীকে জয়যুক্ত করার জন্য ব্যালটপেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখে। এছাড়া আমার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া হয় ও বের করে দেয়া হয়। ফলে ভোট কেন্দ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়। সে কারণে প্রসহনমূলক নির্বাচন বর্জন করছি। সেইসাথে ওই নির্বাচন এ মুহূর্তে বাতিল করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।