বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দাবি জয়ের ব্যাংক হিসাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাংক হিসাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা (তিনশ মিলিয়ন ডলার) জমা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলার নথিতে এটি আছে বলে তার দাবি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ৩৬-তম জাতীয় সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়া প্রশ্ন করেন, এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? তাদের আরও কতো টাকা আছে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়? বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, এই টাকা বাংলাদেশের জনগণের টাকা। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি এর তদন্ত দাবি করে টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এই টাকার ব্যাপারে সরকারের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। কারারুদ্ধ আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা নাকি প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই এ ধরনের অভিযোগকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে সরকার তাদের অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশ-জাতির এক গভীর সঙ্কটকাল চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। বৈধ সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। বাংলাদেশে সুশাসন নেই। সুবিচার নেই। রাষ্ট্রীয় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আইনের শাসন নেই। নেই কোনো মানুষের নিরাপত্তা। সরকার কাউকে কোথাও কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তবু দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে, তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাস কর্মী ও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরনের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারে আসার পর জঙ্গিবাদী তৎপরতাকে কঠোর হাতে দমন করেছিল। জঙ্গিনেতাদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হয়েছিলো। তাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলা সম্ভব হয়েছিলো।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবেশীসহ সব দেশের সাথে শান্তিপূর্ণ মৈত্রীর সম্পর্ক চায়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব দেশের সাথে সব সমস্যা নিরসনের নীতিতে বিএনপি বিশ্বাসী। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে সবকিছুই করা হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে। কারও কাছে মাথা নত করবো না। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি বর্তমান শাসকেরা বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই তাদের বলবো, দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করুন। দেশের অভ্যন্তরে যে সঙ্কট, তা দেশের ভেতরেই আলাপ-আলোচনার পথে নিরসন করুন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করবেন না।