বিএনপির সাথে জোট শরিকদের দরকষাকষি

এখনই তারা আসন ভাগাভাগির রফা চায় : জোট সম্প্রসারণ নিয়ে অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় নির্বাচনেকে সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা রফা করতে চায় এখনই। এ নিয়ে দরকষাকষি শুরু করেছে কয়েকটি নিবন্ধিত শরিক দল। বিষয়টি নিয়ে তারা এতোদিন আড়ালে আলোচনা করলেও প্রকাশ্য সমাবেশে জোটের চারটি শরিকদলের নেতারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে রীতিমত ‘হুমকি’ দিয়েছে বিএনপিকে। কয়েকটি শরিক দল দ্রুত আসন সমঝোতার আলোচনা চাইছে। কিন্তু বিএনপির সাড়া দিচ্ছে না। এ নিয়ে শরিকদের ভেতরে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কর্নেল অব. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারাল ড্রেমাক্রেটিক পার্টি-এলডিপি এবং জাগপা প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছে বিএনপির কাছে। এলডিপির পক্ষ থেকে চলতি এপ্রিলের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির ফায়সালা করার দাবি তোলা হয়েছে। শরিক দলের নেতারা বলছেন, সরকারি দল ও তাদের শরিকেরা নির্বাচনী প্রচারে নেমে গেছে। সরকার বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচন দিয়ে দিতে পারে। তাই বিএনপিরও উচিত খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা। এ লক্ষ্যে শরিকদের সঙ্গে বসা, আশ্বস্ত করা। যদিও ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট আগামী নির্বাচনে যাবেই এমন ঘোষণা এখনও আসেনি। আবার জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় জোট ভোটে যাবে না, এমন কথাই বলছেন জোট নেতারা।

গত মঙ্গলবার রাজধানীতে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর) সম্মেলনে আসন বণ্টনের দ্রুত ফায়সালার দাবি তুলে বক্তব্য দেন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা এবং এলডিপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ। তারা হুমকি দেন এখনি আসন ভাগাভাগি না করলে ২০ দলীয় জোটে ঐক্য অটুট রাখা কঠিন হবে। তারা অভিযোগ করেন জোটের সম্প্রসারণের নামে যেনতেনো দলকে জোটে নেয়া হলে জোট ভেঙে যাবে। এখনই আসন ভাগাভাগির ফায়সালা করতে হবে। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এলডিপি, কল্যাণপার্টি, ন্যাপকে সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো, নানা প্রলোভন ছিলো, কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি গণতন্ত্র ও জোটের স্বার্থে। কিন্তু দুঃখ লাগে যাদের জন্য এই ত্যাগ করেছি তারা গত পাঁচ বছরে একবারও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বিগত দশম সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশ নিলে দশটি আসন, দুইজন মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী দেয়ার প্রস্তাব ছিলো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। বিএনপিকে বলবো, কে কতোগুলো মনোনয়ন চান তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করুন। তাহলে জোটের মধ্যে দ্বন্দ্ব দূর হবে। গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, এবার আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। শাহাদাত হোসেন সেলিম এপ্রিলের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির আলোচনার দাবি জানান।

এদিকে এখনই আসন বণ্টন নিয়ে দরকষাকষিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিএনপি। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, গত ২৫ মার্চ বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছে গুলশান অফিসে। শরিকদলের নেতারা সেখানে সিদ্ধান্ত নেন যে, জোট নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না। এখন তাহলে কেনো হঠাৎ সময় বেধে দিয়ে আসন ভাগাভাগির আলোচনার দাবি করা হচ্ছে? দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাকে মুক্ত করেই আসন বণ্টন নিয়ে কথা বলা হবে। আমরা জোটগতভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চাপাচাপিকে শোভন মনে করছেন না কয়েকটি শরিক দল নেতারা। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, এখন আমাদের মূল দাবি হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছি না।  খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, এখন খালেদা জিয়াকে কিভাবে মুক্ত করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের আলোচনা পরামর্শ এগিয়ে নিতে হবে। অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা গৌন। ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি বলেন, সব শরিকদল এখন আসন ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষি করতে আগ্রহী নন।