বিএনপির ভিশন আওয়ামী লীগের আদলেই

 

স্টাফ রিপোর্টার: নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের সাথে গতকাল বুধবার বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এর অনেক মিল রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি রেখে কিছুটা পরিবর্তন-পরিমার্জন করেছে বিএনপি। গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিলো যথাক্রমে ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১। এর মধ্যে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিলো।

দুই দলের ভিশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গণতন্ত্র, সুশাসন ও পররাষ্ট্রনীতির মতো মৌলিক কিছু বিষয়ে আওয়ামী লীগ ঘোষিত ভিশন দুটির সাথে মোটা দাগের পার্থক্য রয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এর। অনেক বিষয় খালেদা জিয়া বলেছেন, যা সরকার বাস্তবায়ন করেছে কিংবা বাস্তবায়নাধীন। ভিশন-২০৩০ এর ৯৫ অনুচ্ছেদে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মোবাইল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে বিশেষ করে মফস্বলে উচ্চ গতির ফোর জি কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতে ফোর জি বা তার চেয়ে উচ্চ গতির ইন্টারনেট কভারেজ নিশ্চিত করা হবে।’ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনায় শিগগিরই ফোরজি আসছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে। আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের ইশতেহারের ১০.৩ অনুচ্ছেদেও এ বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ ছিলো- দেশজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা যেমন থ্রি-জি চালু হয়েছে। ফোর-জি চালু করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা হবে।

দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ছিলো চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হবে। বিএনপি তাদের ভিশন-২০৩০ এ বলেছে, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, গোমতী, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল নির্মাণ করবে। বিএনপি বলছে, চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করে একে একটি ‘রিজিওনাল হাব’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর আগেই আওয়ামী লীগ দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে গভীর সমূদ্র বন্দরের জন্য স্থান উল্লেখ করে অঙ্গীকার করেছিলো। আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ১৪.২ অংশে বলা হয়েছে, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হবে। রেলকে আধুনিক করার ঘোষণা দুই দলেরই। আঞ্চলিক যোগযোগের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে বিএনপির ভিশনে তা স্থান পেয়েছে। দলটির ভিশনের ২৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সার্কভুক্ত ও আসিয়ান দেশসমূহের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গণচীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ১৪.২ অনুচ্ছেদে রয়েছে- দ্বিতীয় যমুনা সেতু ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কারিগরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। একই কথা একটু বর্ধিত করে বিএনপি তাদের ভিশনের ২৩০ অনুচ্ছেদে বলেছে, সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নকল্পে দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর ওপর আরো সেতু নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন ছোট বড় নদীর ওপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেতু নির্মাণ করা হবে। বিএনপির ভিশনের ২৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সারা দেশে বিভিন্ন মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীত করা হবে। আওয়ামী লীগের ভিশনের ১৪.১ (গ) তে ছিল: ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন নির্মাণ সমাপ্তকরণ।’ তা ইতোমধ্যে প্রায় সমাপ্ত হওয়ার পথে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারের একই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ঢাকা-মংলা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চার লেন নির্মাণের প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের বিদ্যমান সড়কপথগুলোর প্রশস্তকরণ এবং দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন সড়কপথ নির্মাণ করা হবে।

একইভাবে প্রতিরক্ষা খাতে বিএনপি যে ভিশনের কথা বলেছে, এর অনেক আগেই প্রতিরক্ষা বিভাগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নও করছে। বিএনপি তাদের ভিশনের ২০০নং অনুচ্ছেদে বলেছে, কাক্সিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির চাহিদা পূরণের জন্য (২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুতের আনুমানিক চাহিদা ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিবেচনায় নিয়ে) বিএনপি যথোপযুক্ত পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করবে। এর আগে আওয়ামী লীগ তাদের ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রায় বলেছে, দলটি এর মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। তবে বিএনপির ভিশন-২০৩০ এ সুশাসন অংশের ১৭ থেকে ৩৯ নম্বর পর্যন্ত কোথাও যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য উল্লেখ করেনি। আওয়ামী লীগ তাদের সুশাসন, গণতন্ত্রায়ণ ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়ণ অংশের ১.৪ নম্বরে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছে। তবে বিএনপি তাদের ভিশনের ৫৮ অনুচ্ছেদে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেছে।

পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোনো প্রভু নেই। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। বিএনপি মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’ কিন্তু আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে কোন দেশের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে তার একটা বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের ইশতেহারে। বিএনপির ভিশন-২০৩০ এ যা উল্লেখ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ এ ইতোমধ্যে উল্লেখ ছিলো। তবে ক্ষেত্রবিশেষ বিএনপি কিছু বিষয়ে পরিধি বাড়িয়েছে।