বিএনপির তিন অগ্রাধিকার : সংগঠন আন্দোলন ও নির্বাচন

 

স্টাফ রিপোর্টার: দলকেক্ষমতায় নিতে বিএনপি নেতারা তিনটি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্নেরসিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুরুতে সংগঠন গোছানো, এরপর সুশৃঙ্খল সংগঠন দিয়েসরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করা এবং সর্বশেষ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকেআগাম নির্বাচনে বাধ্য করা। পর্যায়ক্রমে এসব কাজ শেষ করার পাশাপাশি জনগণকেসম্পৃক্ত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করাহবে। পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন ধরে রাখার পাশাপাশি ভারতের নির্বাচন গভীর ভাবেপর্যবেক্ষণ করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

এসব প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্তমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপাতত সংগঠন গোছানোরকাজ চলছে। এটি সম্পন্ন হলে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হবে। তিনিবলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে ওই আন্দোলন করলে অবশ্যই যৌক্তিক পরিণতি পাবে বলেআমরা বিশ্বাস করি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেনির্বাচনই ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ বলে বিএনপি মনে করে। সুতরাং নির্দলীয়সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হলে বিএনপিঅবশ্যই সেই নির্বাচনে যাবে।দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, প্রথমপর্বে আগামী পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে দলের জেলা ও মহানগরী কমিটি পুনর্গঠনের পরজাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ওই কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠন হবে দলেরকেন্দ্রীয় কমিটি। এভাবে সংগঠন গোছানোর পর নির্দলীয় সরকারের দাবিতে শরিকদেরসাথে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিপেলে মধ্যবর্তী একটি নির্বাচনে অংশ নেবে তারা। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যেপৌঁছানোর জন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনঅনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে খুবশিগগিরই। এসব সংগঠনের কমিটি গঠনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্কতার সাথেএগোনোর অনুরোধ জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের মতে কমিটি ভালো হলেআন্দোলন জমানো যাবে।পকেট কমিটি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে উদ্দেশ্য সফল নাহওয়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই কোনোভাবেই যাতে পকেট কমিটি উপহার দেয়া না হয় সেজন্যতারা দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছে।

আন্দোলনের পাশাপাশিযুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন ধরে রাখার বিষয়েও দলের শীর্ষ নেতারাতৎপর রয়েছেন। এছাড়া ভারতের নির্বাচনের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। পশ্চিমাবিশ্বের অবস্থান বিএনপি তথা অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের পক্ষেই রয়েছে।আগামীতেও যাতে বিএনপির পক্ষেই থাকে সেভাবে কাজ চলছে। এছাড়া ভারতের সম্ভাব্যক্ষমতাসীন দলের সাথেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি দল গোছানোর কাজচলবে। দল চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন ইস্যুতে পালন করা হচ্ছে কিছু কর্মসূচি। এসবকর্মসূচি পালনের পর শীতের শুরুতে আগামী অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ নতুন উদ্যমেআন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা করছে বিএনপি।

কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানআবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, অপহরণেরবিষয়গুলো এখন আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরছি। জনগণ দেখছে, সরকার আমাদের কোনোকর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। সুতরাং এরপর আমাদের পেছনে ফেরার সুযোগ থাকবেনা। কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন হবে। তিনি বলেন, সংবিধানে মৌলিক অধিকার বহালরাখতে হলে আজ না হয় কাল বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দিতেই হবে।

সূত্রজানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিএনপি খুব বেশি তাড়াহুড়া করতে রাজি নয়।তাড়াহুড়া না কারার বিষয়টিও কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। নেতাদের মতে কৌশলগতকারণে দলটি চাইছে সরকারের সুশাসনসম্পর্কে জনগণ জানুক। গুম, হত্যা ওঅপহরণের চিত্র জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হচ্ছে। সরকারেরব্যর্থতার বিষয় নিয়ে দেশে এবং বিদেশে যাতে আরও বেশি আলোচনা হয় সেজন্য দলেরপক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। একই সাথে দেশের মানুষের মধ্যেসরকারবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে নেয়া হয়েছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। এদিকে, ১৯দলীয় জোটের শরিক ছাড়াও অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীনবিকল্প ধারা, আসম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীরনেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীননাগরিক ঐক্যসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনে রাখার জন্য তাদের সাথেআলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগেসরকারবিরোধী আন্দোলনে এ দলগুলো বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন করলেও তারাএকমঞ্চে উঠেনি। তবে আগামী আন্দোলনে এ দলগুলোর পাশাপাশি সুশীল সমাজেরগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের একমঞ্চে আনার কৌশল গ্রহণ করেছে দলটি।

নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এবারের আন্দোলনের মূললক্ষ্য হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। সুতরাং এতে যারাই শামিল হবেন তাদেরইসাথে নেবে বিএনপি।ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনই বিএনপির মূল টার্গেট। তবে ওই আন্দোলন বেগবান করারজন্য সংগঠন শক্তিশালী করা প্রয়োজন- সে কাজটিই বিএনপি এখন করছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে অবশ্যই সরকারকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।

যুগ্ম-মহাসচিবরিজভী আহমেদ জানান, বিএনপির মূল টার্গেট আন্দোলন-সংগ্রাম। তবে আন্দোলনেরবিভিন্ন বাঁক থাকে, ওঠানামা থাকে। এখন সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ চলছে। এরপরআন্দোলন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করেসরকার নিজেদের শক্তিশালী ভাবছে। কিন্তু জনগণের শক্তিতে বিএনপিও কম নয়। সময়হলে আগামী দিনের আন্দোলনে এটা প্রমাণ হবে।