বাড়ি ফেরার যুদ্ধ : নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ

সাপ্তাহিক ছুটিরদিন শুক্রবারও ঢাকা ছেড়েছেন লাখো মানুষ

ঢাকা থেকে মুনছুর আহম্মেদ:ঢাকা ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষেরা। সাপ্তাহিক ছুটিরদিন শুক্রবারও ঢাকা ছেড়েছেন লাখো মানুষ। দিনভর ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিলোস্টেশনে, টার্মিনালে। কষ্ট, দুর্ভোগকে উপেক্ষা করে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ।রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, প্রথম দিনের চেয়ে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। শুক্রবারেও বেশ কিছু রুটেরবাসের টিকিট পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।

এদিকে অগ্রিম টিকিট না পাওয়াযাত্রীদের জন্য বিশেষ বাসেরও ব্যবস্থা করেছে বাস মালিক সমিতি। রাজধানীতেচলাচলকারী বেশ কিছু সিটি সার্ভিসের বাস পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনশুরু করেছে। তবে দ্বিতীয় দিনে এসে বিলম্বে বাস ছাড়ার অভিযোগ রয়েছে হানিফ, সোহাগ, ঈগল পরিবহনের মতো বড় বড় বাস কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। এ বিষয়েসংশ্লিষ্ট পরিবহন কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, ঈদ যাত্রার প্রথম দিনেরঅনেক গাড়িই ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। তাই ঢাকা থেকে বাস ছাড়তে কিছুটা দেরিহচ্ছে। হানিফ পরিবহনের গাবতলী প্রধান কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির হোসেনজানান, বৃহস্পতিবার যেসব গাড়ি ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে তার অধিকাংশই এখনও ফিরেআসেনি। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো। এ গাড়িগুলো ফিরেআসলেই আবার ঢাকা থেকে রওনা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ একঘণ্টা দেরি হচ্ছে। সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মোসলেম উদ্দিন জানান, সকাল থেকে যে গাড়িগুলো ছাড়ার কথা তা নির্ধারিত সময়েই ছাড়ছে। কিছুটা দেরিহচ্ছে কারণ আরামবাগ, মালিবাগ, পান্থপথ, কল্যাণপুর, শ্যামলীর যাত্রীদেরআলাদা বাসে করে গাবতলী আনা হচ্ছে। সব যাত্রী না পৌঁছানো পর্যন্ত বাস ছাড়াযাচ্ছে না। প্রতিটি বাস ছাড়ার আগে বারবার চেক হচ্ছে সব যাত্রী আসছে কি না।

এদিকে অগ্রিম টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের জন্য বিশেষ বাসের সুবিধা থাকলেওভাড়া গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তানভীর নামে অগ্রিমটিকিট না পাওয়া এক যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি মাগুরা যাব। সকালেএসে কাউন্টারগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখি কোনো টিকিট নেই। পরে টার্মিনালের সামনেদেখি বেশ কিছু বাসের হেলপার পাটুরিয়া ঘাট বলে যাত্রী ডাকছে। এই বাসগুলোরঢাকার মধ্যে চলে। এমনি বিআরসিটিসহ পাটুরিয়া রুটের বাসের ভাড়া ৬০ টাকা করে।কিন্তু ঈদ উপলক্ষে আমার কাছে দেড়শ’ টাকা ভাড়া চাইছে। ট্রেনে ঈদের অগ্রিমটিকিট বিক্রি শেষ হলেও স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য ছিলো দীর্ঘ লাইন। আসনসংখ্যার বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে রাজধানী ছাড়ছে প্রতিটি ট্রেন।কিছু কিছু লোকাল ট্রেনের ছাদও ছিলো ভরা।

গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখাযায়, গত ২১ জুলাই অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন যেসব যাত্রী টিকিট পেয়েছেন তারা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যার যার গন্তব্যে যাত্রা করেছেন। কিছুকিছু ট্রেনে সিট না পেয়ে ছাদে চড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। দুপুরেকমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় চোখে না পড়লেও যাত্রীদেরআসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যস্ত ছিলো রেলস্টেশন। প্লাটফরমে প্লাটফরমে ট্রেনেরঅপেক্ষায় বসে ছিলেন ঘরমুখো মানুষেরা। নির্দিষ্ট সময়ের দেড় থেকে দু ঘণ্টাআগেই স্টেশনে এসে ভিড় করেছেন তারা। যথাসময়ে বাড়ি যাওয়ার আশায় রেলস্টেশনে শশ যাত্রীর চোখেমুখে ছিলো আনন্দের ছাপ। অধিকাংশ ট্রেন সঠিক সময়ে ছাড়লেওযান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছু ট্রেনের যাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৫টি ট্রেনের মধ্যে ৩টি ট্রেন বিলম্বে যায়। দুপুরথেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৫টি ট্রেন বিলম্বে ছাড়ে।

রাজধানীর মিরপুর এলাকারবাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, ট্রেন আসতে দেরি হবে এ চিন্তা মাথায় নিয়েইস্টেশনে এসেছেন। কিছুটা দেরিতে হলেও ট্রেনে চেপে বসতে পেরে খুশি বলে জানানতিনি। কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বশীর জানান, ট্রেনের সময়সূচিঠিক রাখার ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবার তারা ট্রেনেরশিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে পারছেন। কোন ট্রেনেরই খুব একটা দেরি হচ্ছে না।যাত্রী ভিড় সামলাতে সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকেই নেয়া হয়েছে। তিনি আরওজানান, শুক্রবার ১৩০টি ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্নগন্তব্যে ছেড়ে যাবে। ঈদে রেল যাত্রীদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে রেলকর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও চেষ্টার অভাব নেই। সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছাড়বেবলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়াও বিমানবন্দর রেলস্টেশনেছিলো যাত্রীদের ভিড়। এই স্টেশন থেকে ট্রেনের ছাদে করে ঢাকা ছেড়েছেন অনেকমানুষ। এদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শ্রমজীবী। সকাল থেকেই বিমানবন্দর স্টেশনেঘরমুখো মানুষেরা ভিড় করতে থাকেন। অগ্রিম টিকিট না পাওয়ায় স্ট্যান্ডিংটিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠছেন অধিকাংশ মানুষ। ট্রেনের ভেতরে সংকুলান না হওয়ায়জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠেছেন অনেকে। স্টেশন কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে এঘটনা ঘটলেও কোন প্রকার বাধা দেয়া হয়নি।

এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিকেল৩টা ২০ মিনিটে উপকূল ট্রেনটি নোয়াখালীর উদ্দেশে  ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, বগি বিকল হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরও ট্রেনটি কমলাপুর ছাড়তেপারেনি। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। প্লাটফরম মাস্টারের কক্ষে গিয়েএ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারেননি যাত্রীরা। উল্টো প্লাটফরম মাস্টার তাদেরধমক দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। একই কারণে স্টেশন মাস্টার ওস্টেশন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এসেও তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানানযাত্রীরা। কোন ট্রেন কখন ছাড়বে এ বিষয়ে তার কাছে কোন তথ্য নেই। স্টেশনমাস্টার নিতাই চন্দ্র জানান, ট্রেনটির একটি বগি বিকল হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিতসময়ে ছাড়া সম্ভব হয়নি। তবে ৫টার দিকে ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যেতেপারে বলে জানান তিনি। এদিকে দিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদ উপলক্ষে বাড়তিট্রেন সার্ভিস। কমলাপুর স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন জানান, ঈদের পরসাতদিন পর্যন্ত ঢাকা থেকে পার্বতীপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও খুলনার উদ্দেশে তিনটিবাড়তি ট্রেন চলাচল করবে।

শনিবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশেছেড়ে যাবে দেওয়ানঞ্জ স্পোশাল সার্ভিস। এরপর বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে খুলনারউদ্দেশে খুলনা স্পেশাল সার্ভিস এবং বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে পার্বতীপুরেরউদ্দেশে ছেড়ে যাবে পার্বতীপুর স্পেশাল সার্ভিস। রেল কর্তৃপক্ষের ঘোষণাঅনুযায়ী, ঈদের সময় এবার বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনে ১৬৬টি অতিরিক্ত কোচ এবংঅতিরিক্ত লোকোমোটিভ সংযোজন করা হবে।