বাড়ির উঠোনে ভাইকে খুন হতে দেখা ইমান আলী ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই স্কুল ছাড়ে : বিগড়ে যায়

জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে গুলির লড়াই : নিহত ব্যক্তির মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার: ৪ ভাইয়ের মধ্যে ইমান আলী ঝরে গেলো পুলিশের সাথে গুলির লড়াইয়ে। আর একভাই মান্নান নিজেদের বাড়ির উঠোনেই প্রতিপক্ষের নৃশংস হামলায় খুন হন। বড়ভাই মান্নান যখন খুন হন তখন ইমান আলীর বয়স ছিলো ১২-১৩ বছর। ভাইয়ের খুনের বদলা নেয়ার জন্য, নাকি সঙ্গদোষে ইমান আলী বিপথগামী হয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে না পারলেও তার মেজ ভাই হান্নান বলেছেন, ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছিলো ইমান আলী। এরপর এলাকার খারাপ মানুষদের সাথে মিশতে দেখে বাড়ি থেকেই ওকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়। তাতে লাভ হয়নি। মাঝে মাঝে ফিরে একের পর এক মামলায় জড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩২ বছর বয়সেই ওর গুলিবিদ্ধ লাশ নিয়ে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করতে হলো।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের হারদা চাঁদপুরের জোড়াতলাপাড়ার ফকর উদ্দীন ব্যাপারির ছেলে ইমান আলী গতপরশু রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-দেহাটি সড়কের পাশে বসে বৈঠক করার সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ ইমান আলীসহ কিছু অস্ত্র-সশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলেছে, ইমান আলীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত করা হয়। বিকেলে মৃতদেহ গ্রহণ করেন ইমান আলীর মেজ ভাই আব্দুল হান্নান। নিজ গ্রামে মৃতদেহ নিয়ে গতকালই সন্ধ্যার কিছু পূর্বেই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। ইমান আলী ছিলো অবিবাহিত। পিতা-মাতা দুজনই জীবিত।
ইমান আলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গেলে তার মেজ ভাই আব্দুল হান্নান বলেন, ১৯৯৭ সালে বড় ভাই মান্নাকে আমাদের বাড়ির উঠোনেই গ্রামের প্রতিপক্ষের লোকজন প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে। রাজনীতির কারণেই তাকে প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়। অথচ আমরা ওই খুনের বিচারও তেমনভাবে চাইতে পারিনি। ওই সময় আমারই ছোট ৪ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় তথা সেজো ইমান আলী স্কুলে পড়তো। তখন বয়স ছিলো ১২-১৩ বছর। ও বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আচরণ সন্দেহজনক হতে শুরু করে। এলাকার কিছু চিহ্নিত মানুষের সাথে মেলামেশাও করতে থাকে। ওকে ভালোপথে রাখার জন্য বুজিয়ে সুজিয়ে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। তাতেও লাভ হয়নি। মাঝে মাঝে ফিরে একের পর এক মামলায় জড়ায়। সর্বশেষ অস্ত্র মামলা ও তেলপাম্প ডাকাতি মামলায় টানা ৪ বছর হাজত খাটে। আনুমানিক ৪ মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়। এরপর আমরা আবারও ওকে ঢাকায় পাঠায়। ঢাকাতেই থাকতো। ঢাকার একটি পরিবহনে হেলপারি করতো বলে শুনেছি। সর্বশেষ গত সোমবার ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরে। মামলায় হাজিরা দেবে বেলে বাড়ি থেকে বের হয়। ওই সময় ওর সাথে দুজন ছিলো। তারা জানান, ডিবি পরিচয়ে ওকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর ডিবিসহ বহু স্থানে খোঁজ নিয়েও ওর সন্ধান পাইনি। সকালে মাথাভাঙ্গা পড়ে এক আত্মীয় জানান, ইমান আলী বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষ ইমান আলী সম্পর্কে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি। তবে জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া ও সন্তোষপুর মোড় এলাকায় গতকাল সকাল থেকেই ছিলো স্বস্তির বাতাস। চা দোকান থেকে শুরু করে বাড়ির অন্দর মহলে একই আলোচনা, ডাকাত মরেছে। এবার যদি সড়কে ডাকাতি কিছু কমে। দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে ডাকাতদল সুযোগ বুঝে ডাকাতি করে। পুলিশের টহল থাকলেও ডাকাতদলের অপতৎপরতা বন্ধ হয়না বললেই চলে। এরই মাঝে গতপরশু রাতে বহুল আলোচিত সড়কে ঘটলো পুলিশের সাথে দুর্বৃত্তদলের গুলির লড়াই। পতন হলো ইমান আলীর।
ইমান আলীর জীবিত দু ভাইয়ের মধ্যে মেজোভাই আব্দুল হান্নান গ্রামের চা দোকানি। ছোটভাই আশরাফুল ইসলাম দিনমজুর। এ দুভাইয়ের অভিমত, ওই ইমান আলীকে সুপথে রাখতে এবং তার মামলার পেছনে খরচ করতে বেশকিছু জমিও বিক্রি করতে হয়েছে পিতাকে। ফলে এখন এ পরিবারের ভিটেটুকু আর মাঠের ১০কাঠা ছাড়া তেমন আবাদি জমি নেই।