বাড়তে পারে সেনাবাহিনীর মাঠে থাকার মেয়াদ

স্টাফ রিপোর্টার: বাড়তে পারে মাঠে থাকা সেনাবাহিনীর মেয়াদ। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী চেয়েছিলো। সেনাবাহিনীর নির্বাচনে মাঠে থাকার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সাথে সাক্ষাত শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে প্রয়োজনে অধিক সময় সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখা হবে। নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হলে সেনা মোতায়েনের মেয়াদ বাড়ানো হবে। সিইসির নেতৃত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কার্যালয়ের সচিব সাক্ষাত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বৈঠকে তারা দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমিশনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভোট গ্রহণের দিন ৫ জানুয়ারির বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রায় একঘণ্টা তারা বঙ্গভবনে অবস্থান করেন। ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির জন্মদিনের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ তাকে অভিনন্দন জানান।

বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সব বন্দোবস্ত চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে যেতে-আসতে ভোটারদের জন্য শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। এতে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিইসি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৯ জানুয়ারির পরও সেনাসদস্য থাকবেন কি-না, তা তখনকার পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত হবে।

সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে আরও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানান হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আগে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। বিরোধীদলের অবরোধ কর্মসূচির কারণে ভোট গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, অবরোধ মানে তো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে না পারা। সুতরাং স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের চলাচলে অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না।

বিরোধীদলবিহীন নির্বাচন কেমন হবে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, কমিশন চেয়েছিলো সব দলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সেজন্য সময়ও দেয়া হয়েছিলো। রাষ্ট্রপতিকেও সমঝোতার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানান হয়েছিলো। কিন্তু যখন দেখলাম কোনো সমঝোতা হচ্ছে না, তখন বাধ্য হয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সমঝোতার জন্য অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, বিদেশিরাও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই তো হলো না। তবে নির্বাচনে যে কয়টি দলই অংশ নিক না কেন, নির্বাচন স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ হবে বলে সিইসি আশ্বাস দেন।

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ইসি: প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে। সারাদেশে অব্যাহত সংঘর্ষের মধ্যে ভোটগ্রহণের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিরাপত্তা রক্ষায় কাল শনিবার থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া অন্যবারের চেয়ে এবার নিরাপত্তায় রক্ষায় কৌশলী হয়েছে ইসি। তবে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত কমিশন। এমনকি গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কমিশনে নিরাপত্তা জোরদারে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আবেদন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কক্সবাজার জেলার ডিসি এ চিঠি পাঠান। কাল শনিবার থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: মোটরসাইকেলেচালক ছাড়া অন্য আরোহী বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে নাশকতারোধ করতে গত ২৮ ডিসেম্বর বিআরটিএ এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে মোটরসাইকেলেচালক ছাড়া অন্য আরোহী বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।