বাহিনী প্রধান দুখুর ফাঁসি : দুজনের যাবজ্জীবন

মেহেরপুর গাংনী ধলা গ্রামে ইউপি সদস্যসহ তিন ভাইকে হত্যা মামলার রায়

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের তিন সহোদর হত্যা মামলায় জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারতে পলাতক দুখু বাহিনী প্রধান দুখুর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় দুখুর সহযোগী আজিমুদ্দীন ও চেতন আলীকে যাজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিজ্ঞ বিচারক টিএম মুছা এক জনাকীর্ণ আদালতে ওই আদেশ দেন। ৩২ জন আসামির মধ্যে তিনজন দণ্ডিত এবং বাকিরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এর মধ্যে দুখু ও তার সহযোগী আজিম উদ্দীন ভারতে পলাতক রয়েছে। চেতন আলী রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ইউপি নির্বাচনের বিরোধ কেন্দ্র করে ২০০৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলা গ্রামে এক কিলিং মিশনে ইউপি সদস্য ইমদাদুল হক ও তার ভাই জাহিদুল ইসলাম এবং রুহুল আমিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করে সন্ত্রাসীরা।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহত ইমদাদুল হকের স্ত্রী রেনুকা খাতুন বাদী হয়ে বাহিনী প্রধান দুখুকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর দুখুসহ ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন গাংনী থানার মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলায় ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, গাংনী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করেছিলো দুখু। এলাকার মানুষকে অপহরণ করে ভারতে আটকে রেখে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দেয়া হতো। এছাড়াও সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের আরো ৪/৫টি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুখু ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এলাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও তার জীবনে নেমে আসতো দুখু বাহিনীর নির্যাতনের খড়গ। কিন্তু অপরাধ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে দুখ। সর্বশেষ তিন সহোদরকে হত্যার দিন ভারত থেকে লোকজনসহ এদেশে প্রবেশ করে দুখু। গভীর রাতে তিন সহোদরকে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় গুলি ও কুপিয়ে খুন করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ওইদিন নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সামনেই দুখু ও তার বাহিনীর সদস্যরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। এরপর থেকেই দুখু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। সেখানেই কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে গ্রেফতার হয়। কিন্তু দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলা অবস্থায় সে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো আত্মগোপন করে। তারপর থেকেই এলাকায় দুখু বাহিনীর কোনো তৎপরতা না থাকলেও সীমান্তবর্তী মানুষের মাঝে দুখু বাহিনীর আতঙ্ক আজও কাটেনি।

এদিকে রায় ঘোষণার পর বাদীপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রায়ে প্রধান আসামির ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বেকসুর খালাস হওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে উচ্চাদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেহেরপুর জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শহিদুল হক। মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল মতিন, অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট শাহীনুর রহমান।