বাস-মিনিবাস ও ট্রাকমালিক গ্রুপের সভা : পরিবহন বন্ধ ঘোষণার আল্টিমেটাম

মেহেরপুরে ইজিবাইকসহ অবৈধযান প্রধান সড়ক থেকে উচ্ছেদের দাবি ফের জোরদার

 

মেহেরপুর অফিস : মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কে শ্যালোইঞ্জিন চালিত নসিমন-করিমন, আলমসাধুসহ অবৈধযান ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চলাচল নিয়ে মোটর মালিক-শ্রমিক ও ইজিবাইক চালক-মালিক সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সমস্যার সমাধান না হলে বাস-মিনিবাস ও ট্রাক মালিকগ্রুপ সব ধরণের বৈধযান চলাচল বন্ধের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় ওই ঘোষণা দেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল।

মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কে বাস মালিক সমিতির নামে ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় ও চলাচলে বাধার প্রতিবাদে মেহেরপুর-কাথুলী সড়ক অবরোধ করেন ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালকরা। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের পৌর ডিগ্রি কলেজের সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। দুপুরে শতাধিক ইজিবাইক চালক ইজিবাইক নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে মেহেরপুর-কাথুলী ভায়া গাংনী সড়কে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করে। বিষয়টি সমাধানের জন্য ইজিবাইক মালিক-চালক সমিতির প্রতিনিধিদের সাথে দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের বৈঠকে শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাস-মিনিবাস ও ট্রাক মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত না হওয়ায় সমস্যাটি অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

এদিকে রাত ৯টায় মেহেরপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, গত ১৭ আগস্ট দুপুরে মেহেরপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে জেলা বাস-মিনিবাস ও ট্রাক মালিক গ্রুপের সভা হয়। ওই সভায় পুলিশ সুপার হামিদুল আলম প্রধান অতিথি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় মালিক-শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান অতিথি আশ্বাস দেন-যেসব সড়কে বাস-মিনিবাস চলাচল করে সেসব সড়কে ইজিবাইকসহ অবৈধযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বুধবার থেকে বাস-মিনিবাস ও ট্রাকসহ সব ধরনের বৈধযান চলাচল বন্ধের আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু বুধবার দুপুরের দিকে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টুর একটি বাস ও খোকন মিয়ার একটি বাস মেহেরপুর-কাথুলী বাসস্টান্ডে অবস্থান করাকালে কতিপয় ইজিবাইক চালক বাস দুটির চালক নাজাত ও খোকনের নিকট ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তারা জোর করে যাত্রী নামিয়ে বাস দুটি আটকে দেয়। খবর পেয়ে বাস মালিক আব্দুল কুদ্দুস, জাহাঙ্গীর মিয়া, খলিল মিয়া, মোফাসসের মিয়া প্রমুখ মালিকদের সাথে নিয়ে বেলা ১টার দিকে কাথুলী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু। এসময় ইজিবাইক চালকরা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে বাস-মিনিবাস মালিকরা আহত হন। তারা খুন জখমের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বাসচালক নাজাত আলীর নিকট থেকে জোর করে ২৫ হাজার ৫শ টাকা ও একটি নোকিয়া মোবাইল ও হেলপার নাহিদের নিকট থেকে একটি স্যামসাং মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া তারা বাস দুটির কাঁচ ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে শহরের বেড়পাড়া এলাকার আমিরুল ইসলাম, সাজেদুল হক সাজু, জনি, রফিক, সোহেল মিস্ত্রি, জয়নাল, আলমগীর, সোহেল, রনি ও সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামি করে মেহেরপুর থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন।

আলহাজ গোলাম রসুল আরো বলেন- সোমবার মেহেরপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়াতনে সভায় পুলিশ সুপার হামিদুল আলমের দেয়া বক্তব্য বাস্তবায়িত হলেই তারা কোনো আন্দোলনে যাবেন না ও পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেবেন না। তিনি জোর দিয়ে দাবী করেন- যারা বাসমালিকদের মেরেছে এবং গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে এজাহারে উল্লেখিত ওই সব আসামিদের আটকসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৬টা থেকে অনিদৃষ্টকালের জন্য বাস-ট্রাকসহ সব ধরণের বৈধযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সহসভাপতি মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু, সড়ক সম্পাদক হামিদুল হক, কোষাধ্যক্ষ রেজানুর রহমান, নুরুল ইসলাম বাবলু, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুর রশিদ, সাফুয়ান আহমেদ রুপক, খলিলুর রহমান প্রমুখ।

মেহেরপুর ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল আনাম জানান, সড়কে বাসমালিক সমিতি মনোনীত কিছু ব্যক্তি ইজিবাইক চলাচলে বাধা ও জোরপূর্বক টাকা আদায় করছে। এটি বন্ধ না হলে আরো কঠোর আন্দোলন করা হবে। তিনি আরো দাবি করেন- মেহেরপুরে কোনো হাইওয়ে সড়ক নেই। তারপরও মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা দুটি প্রধান সড়ক ছেড়ে দিয়েছি। যেহেতু মুজিবনগরে দর্শনার্থী যায় সেহেতু আমাদের ইজিবাইক চালকরা ওই সড়কসহ সব পকেট সড়কে ইজিবাইক চলায়।