বাম্পার ফলনেও মেহেরপুরের ধানচাষিরা হতাশ

মহাসিন আলী: মেহেরপুরে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দাম না পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান সফল না করে ধানের মরসুমে বাইরে থেকে চাল আমদানি করায় কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না। এভাবে বছর বছর ধান চাষ করেও দাম না পাওয়ায় কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এমন মন্তব্য স্থানীয় সুধিজনের।

চলতি বছরে মেহেরপুর জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২০ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে এ মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে মেহেরপুরের মোট ৩ টি উপজেলায় ২১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে উপপরিচালক এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান আরো জানান, এ জেলার মাঠ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কেটে কৃষক ঘরে তুলেছেন। জেলার চাষিরা হেক্টর প্রতি উৎপন্ন ধান থেকে ৪ দশমিক ২ টন করে চাল পাচ্ছেন। বাংলা হিসেব মতে বিঘা প্রতি ২২ মনেরও বেশি ধান পাচ্ছেন চাষিরা। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ছাড়া কম নয়। এজেলায় ধানের বাম্পার ফলনে কৃষি বিভাগও খুশি।

এদিকে দাম না পেয়ে এ জেলার কৃষকরা হতাশ। মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দীন জানান, এবছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, লেবার খরচ সব মিলিয়ে ধান চাষ থেকে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে তার ১২ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকায় ও ধান চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছেনা বললেও চলে। আড়ৎদার ও ধান ব্যবসায়ীর আগামন কম। দু-একজন ক্রেতার দেখা মিললেও ধানের মোটা চিকন ভেদে সাড়ে ৪শ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা মন দরে ধান বিক্রি হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক কাওছার আলী জানান, তিনি এবছর ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ধানের ফলন ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মন ধান পাচ্ছেন এ জেলার কৃষক। তবে বাজারে ধানের ক্রেতা ও দাম না থাকায় তারা হতাশ। তিনি আরো বলেন, এ বছর এখনও সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হয়নি। এমনকি সরকার ধান না কেনাই গত অগ্রাহায়ণের আমন ধানও কৃষকের ঘরে রয়ে গেছে। তিনি মনে করেন সাড়ে ৭শ টাকা থেকে ৮শ টাকা মন বিক্রি করা গেলে ধান চাষে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।

এলাকার ধানব্যবসায়ী রবিউল জানালেন, জেলার বাইরে ধানের চাহিদা কম থাকায় ধান কেনা-বেচা করা যাচ্ছেনা। ধান ব্যবসায়ী অনেকে মনে করেন- ধান উৎপাদন মরসুমে সরকার বিদেশ থেকে চাল সংগ্রহ করায় এদেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলাকার সুধিমহল মনে করেন, ধান উৎপাদন মরসুমে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ না করলে এদেশের ধান চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমনকি ধান অবিক্রি থাকা কিংবা ধান চাষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতীতের ন্যায় এ এলাকার আরো অনেক চাষি ক্ষতিকারক তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। যা এ জেলার ঊর্বর মাটির ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।