বাবা হলেন মিয়ানমারে আটক রাজ্জাক

 

স্টাফ রিপোর্টার: সংসারে অপার্থিব আনন্দ ছড়িয়ে দেয় নবজাতকের কান্না। মিয়ানমারে আটক বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাকের ঘরে রোববার সকালে ভুমিষ্ঠ হয়েছে সন্তান। এ শিশুও কেঁদেছে। কিন্তু তার সে কান্না আনন্দ ছড়ায়নি ঘরে। বরং ওই কান্না হারিয়ে গেছে পরিবারের অন্যদের কান্নার স্রোতে। রাজ্জাক বাবা হয়েছেন বিশ্ব বাবা দিবসে। কিন্তু এখনো বাবার স্পর্শ পায়নি তার তৃতীয় সন্তানটি। কবে পাবে, আদৌ পাবে কি-না এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারো।

রাজ্জাকের নাটোরের বাড়িতে বিরাজ করছে তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাড়িময় বিষাদের ছায়া। এ পরিবেশেই রোববার সকালে জন্ম হয়েছে রাজ্জাকের পুত্র সন্তানের। তারপরও পরিবারে নেই কোনো আনন্দ উচ্ছ্বাস। অপহৃত রাজ্জাক এখনও উদ্ধার না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তার বৃদ্ধ বাবা তোফাজ্জল হোসেন তারা মিয়া, মা বুলবুলি বেগম ও স্ত্রী আসমা বেগম। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলার সিংড়া উপজেলার বলিয়াবাড়ী গ্রামে নায়েক আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে শোকের মাতম। অঝরে কাঁদছেন রাজ্জাকের মা-বাবা। স্বামীর চিন্তায় বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন আসমা বেগম। স্বামীর আটকের খবর শোনার পর থেকেই তিনি নির্বাক। বাবার জন্য কাঁদছে রাজ্জাকের বড় দুই সন্তান সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাকিবুল হোসেন ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রিতু মনি। অধীর হয়ে তারা অপেক্ষা করছে কখন আসবে তাদের বাবা।

রাজ্জাকের পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী জানায়, গত ১৬ জুন রাতেও বাড়িতে ফোন করে বাবা, মা ও স্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন রাজ্জাক। পরের দিন ভোরে নাফ নদীতে অন্য ছয় সহকর্মীর সাথে টহল দেয়ার সময় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) তাদের ওপর হামলা করলে একজন গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সময়ই রাজ্জাককে অপহরণ করা হয়। রাজ্জাক ২১ বছর আগে তৎকালীন বিডিআরে যোগ দেন।

পরিবারের অভিযোগ, বিজিবি বা প্রশাসনের কেউ রাজ্জাকের পরিবারকে এ খবরটি দেয়নি। সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী রাজ্জাকের মামা ভুট্টু মিয়া ফেসবুকে ভাগ্নের হাতকড়া পরা ও নাকে রক্ত মাখা ছবি দেখে পরিবার-পরিজনদের প্রথম খবর দেন। তার মাধ্যমেই পরিবারের লোকজন জানতে পারেন রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাজ্জাকের হাতকড়া পরানো ছবি দেখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বহুগুণে বেড়ে গেছে তার পরিবারের সদস্যদের। তারা দ্রুত রাজ্জাককে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

রাজ্জাকের বাবা তোফাজ্জল হোসেন তারা মিয়া বলেছেন, আমার ছেলে দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আটক হয়েছে। এখন দেশ তার জন্য কিছু করছে না কেন? তিনি আরও বলেন, টিভিতে নানা জন নানা কথা বলছে। এসব শুনতে চাই না। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।

নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বনিক বলেছেন, বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাকের পরিবার এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্রুত রাজ্জাককে পরিবারের মাঝে ফিরে আনতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।