বাধা দেয়ায় শাশুড়িকে কুপিয়ে ও মাইক্রোবাস চাপা দিয়ে হত্যা : মামলা দায়ের

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার দর্শনা আজমপুরে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে জোর করে টেনেহেঁচড়ে তুলে নিয়ে গেছে নেশাখোর জামাই ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ সময় মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে নেশাখোর জামাই আতিয়ার তার শাশুড়ি তহমিনাকে (৪৭) পায়ের রগ কেটেপরে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। প্রতিবেশীরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার সময় পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত তহমিনার স্বামী আব্দুল কাদের বাদী হয়ে জামাই আতিয়ার ও তার চাচাতো ভাই লতিফসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের নামের দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলার সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান। অপহৃত জোসনার সন্ধান পেয়েছে তার পরিবারের লোকজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর শহরের আজিমপুর মসজিদপাড়ার আব্দুল কাদেরের একমাত্র মেয়ে জোসনার সাথে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার গুয়াকলী গ্রামের মৃত শের আলীর ছেলে আতিয়ার রহমানের সাথে ৭ বছর আগে বিয়ে হয়। সম্পর্কে তারা মামাতো ফুপাতো ভাই-বোন হলেও বিয়ের পর থেকেই উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরই এক পর্যায়ে প্রায় বছর চারেক আগে জোসনা নিজ বাড়িতে চলে আসে। ওই সময় জামাই আতিয়ার তার কিছু সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে নিয়ে দর্শনায় এসে অনেকটা জোর করেই স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জোসনার পিতা আব্দুল কাদের দামুড়হুদা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। বাড়িতে এসে জোসনা তার স্বামীকে তালাক দেয়। স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর থেকেই আতিয়ার তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে তুলে নিয়ে বলে হুমকি দিয়ে আসছিলো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নেশাখোর আতিয়ার তার ৪/৫জন সাঙ্গপাঙ্গকে সাথে নিয়ে মাইক্রোসহ হাজির হয় তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর পিতার বাড়ি দর্শনা আজমপুরে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই জামাই আতিয়ার ও তার সাথে আসা সাঙ্গপাঙ্গরা শ্বশুর কাদেরের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং জোরপূর্বক তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী জোসনাকে টেনে হেঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় জোসনার মা তহমিনা খাতুন বাধা দিতে এলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে নেশাখোর জামাই আতিয়ার। মেয়ে জোসনা চিৎকার চেঁচামেচি করলেও তাকে জাপটে ধরে টেনেহেঁচড়ে তুলে নেয় মাইক্রোবাসে। মেয়েকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন মা তহমিনা। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মা তহমিনা শেষ রক্ষা করতে এলে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট করে চলে যায় জামাই ও তার সাথে আসা সাঙ্গপাঙ্গরা। মা তহমিনার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসার আগেই মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। প্রতিবেশীরা তহমিনাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু বলে ঘোষনা দেন। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হবে। এদিকে তহমিনা মারা গেছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মহল্লায় নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। নিহত তহমিনার স্বামী আব্দুল কাদের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ঘটনার সময় আমি ও আমার ছেলে জুয়েল দুজনেই বাজারে ছিলাম। ঘটনার পর প্রতিবেশীরা আমাদের কাছে খবর দেয়।

বিয়ের ৪ বছরের মাথায় আতিয়ার ও জোসনার বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর থেকে আতিয়ার তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলো। বছর দুয়েক আগে আতিয়ার লোকজন সাথে নিয়ে জোসনাকে তার পিতার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেলেও পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।

খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। এ ঘটনায় নিহত তহমিনার স্বামী আব্দুল কাদের বাদী হয়ে জামাই আতিয়ার ও তার সাথে আসা একই গ্রামের আতিয়ারের চাচাতো ভাই মৃত জহর আলীর ছেলে আব্দুল লতিফের (৩৮) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের নামে গতকাল রাতেই দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যামালা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও জোসনা নিরাপদে আছে বলে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান বলেছেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।